আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ
রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্যুৎলাইনে পৃষ্ট শিশু মৃত্যুর দুয়ারে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেই কোন ভূমিকা
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং এর অপরিকল্পিত বালি স্তুপে খেলতে গিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাওয়া (১৩) নামের এক শিশু ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের গুনগুনিয়া বেতাগী ৯ নং ওয়ার্ড আরব আমিরাতের শেখ আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন প্রজেক্টের পূর্ব গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, নানার বাড়িতে বেড়াতে আসা আহত মাওয়া উপজেলার মরিয়ম নগর ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দবাড়ী এলাকার মোহাম্মদ আলমগীরের মেয়ে, সে মরিয়ম নগর নুরুল উলুম মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
মাওয়ার মামা নজু মেম্বার বলেন, বৃহস্পতিবার মাওয়া তার পরিবারের সঙ্গে আমার ভাইয়ের মেজবানের দাওয়াতে আসে। বিকেলের দিকে খেলতে আরব আমিরাত প্রকল্পের বালুর স্তুপের দিকে গেলে সেখানে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে যায়। পরে আশেপাশের লোকজন তাকে দেখে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। মুমুর্ষ অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করেন। তার শরীরের প্রায় ৬০ ভাগ পুড়ে যায়।বর্তমানে সে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পরিবারের পক্ষে কেউ মামলা করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, মেয়েটার এমন অবস্থায় আমাদের কারো মনের অবস্থা ভাল নেই। এখনো শিশুটির ছেঁড়া কাপড় ও স্যান্ডেল ঘাতক স্থানে বিদ্যমান। এই মুহূর্তে বাচ্চার জীবন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্নতার মধ্যে সময় পার করছি, পরে সবার সম্মতি অনুসারে পদক্ষেপ নিলে জানাব।
সরজমিনে পরিদর্শনকলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এ সময় তারা গণমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, বালি উত্তোলনের সময় তারা কি কেউ বিদ্যুৎ খুটি দেখেনি? বালুর স্তুপের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটির বিষয়ে এলাকাবাসীর বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ জানে না এই ঘটনা। পল্লী বিদ্যূৎ এর কয়েকটি খূঁটি সহ ক্যাবল বালির স্তুপে ডুবে গেছে। বালি ও বিদ্যূৎ লাইন মিলেমিশে একাকার হয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীর বারংবার অভিযোগ পরেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাবর অভিযোগ দেওয়ার ব্যাপারে বলেন কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মরত কর্মীরা।
দুর্ঘটনা বিষয়ে জানতে পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরার সাথে গত দুদিন ধরে মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ করেনি কোন বারেই। এছাড়াও, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা, মোঃ সামছুল আরেফিন, মোঃ শাহীন বাদশা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী/শাখা কর্মকর্তা পেলে চাকমাদের অনেকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কোন বক্তব্য, এই দুর্ঘটনার দ্বায় এড়াতে যেন গা ডাকা দিয়েছেন সকলেই। সকলের মুখে একই সুর, বললেন তয়ন কুমার ত্রিপুরা স্যারের সাথে কথা বলুন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী বলেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমি তখনই জেনেছি এবং এর ছয় মাস আগে থেকে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম জুয়েল দাশ আমাকে অভিযোগ করলে আমি লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ার টাঙিয়ে দিতে বলি।
এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন এর ব্যবস্থা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই, কারণ এটি সরকারি প্রকল্পর মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজটি করা হচ্ছে। তবে এর আগে যখন বালি ফেলা হচ্ছে তখন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যে স্থানে বালি স্তুপ করা হয়েছে সেটি সরকারি জায়গা, যদি ওইখানে বালি স্তুপ করার পারমিশন না নিয়ে থাকে এর ভিত্তিতে কেউ যদি অভিযোগ দেয় এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।
রাঙ্গুনিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক জুয়েল দাশ বলেন, গত ছয় মাস আগে বেশ কয়েকবার ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দিয়েছি পরবর্তীতে লাল ফ্লাগ টাঙিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।
উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ইপি চেয়ারম্যান মোঃ শফি বলেন, বালি স্তুপ করার সময় আমি মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে কয়েকবার অবগত করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি পরে উপায় না দেখে দুইজন চকিদারকে নজরদারির করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক এনায়েতুর রহিম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন, বালুর টালে শিশুরা দল বেঁধে কৌতুহলে খেলবে বিষয়টি স্বাভাবিক কিন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের চরম অবহেলা একটি শিশুর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাঙ্গুনিয়া তথা দেশবাসি উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া এই প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিভাবে পর্বত সমান বালি স্তুপের আয়োজন করতে পারে। যারা এই অপর্মের সাথে জড়িত সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় জোরদার দাবি জানাচ্ছি।