শেষ স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করলেও দুই ধাপ এগিয়ে গেছে নেদারল্যান্ডস
নয়া দিল্লি, ১৪ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : একমাত্র সহযোগী দেশ হিসেবে ১০ দলের চলমান বিশ্বকাপে খেলেছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করা দলটি ২০২৩ বিশ^কাপে একটাই এজেন্ডা নিয়ে খেলতে এসেছিল, তাদের উপর থেকে যেন ‘সহযোগী’ ট্যাগটি উঠে যায়। সেই লক্ষ্য কতটুকু সফল হয়েছে তা সময়ই বলে দিবে।
বাছাইপর্ব ও মূল আসরের মাঝে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি ডাচরা। কিন্তু ভারতের মাটিতে তাদের পারফরমেন্স দেখে মনে হয়নি প্রস্তুতিতে কোন কমতি ছিল। নিজেদের প্রতিভাকে ছাপিয়ে তারা ক্রিকেট বিশ^কে অন্তত এটুকু বার্তা দিতে পেরেছে ভবিষ্যতে যে কোন প্রতিপক্ষকে তাদের নিয়ে ভাবতে হবে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত খেলার কোন সুযোগ হয়না। কিন্তু টেবিলের তলানিতে থেকে বিশ^কাপ শেষ করা দলটিকে নিয়ে কোন ধরনের সমালোচনা এখনো পর্যন্ত শোনা যায়নি। পয়েন্ট তালিকা তলানীতে থাকায় স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারছেনা নেদারল্যান্ডস। কিন্তু আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে নতুন এক শক্তির আবির্ভাবের বার্তা ঠিকই দিয়ে গেছে নেদারল্যান্ডস। একইসাথে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির আকাঙ্খাও জানিয়ে দিয়ে গেছে।
দলের প্রধান কোচ রায়ান কুক বলেছেন, ‘আমি এখানে বেশ কিছু দলের কোচের কাছ থেকে কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। তারা আমাকে আমাদের সূচী সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। সম্ভবত আমাদের সাথে তারা ম্যাচ খেলতে চায়।’
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করেছির নেদারল্যান্ডস। এবার সেই শক্তিশালী প্রোটিয়াদের আবারো বধ করে অঘটনের জন্ম দিয়েছে কুক বাহিনী। যদিও ৫০ ওভারের ম্যাচ একেবরেই ভিন্ন একটি ফর্মেট। কিন্তু ডাচদের খেলা দেখে মনেই হয়নি তারা শীর্ষ সারির কোন দলের বিপক্ষে লড়াই করছে। বৃষ্টির কারনে ধর্মমশালার ম্যাচটি ৪৩ ওভারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। প্রথমে ব্যাটিং করে নেদারল্যান্ডস ৮ উইকেটে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে। অথচ একসময় ১৪০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল তারা। স্কট এডওয়ার্ডসের অপরাজিত ৭৮ ও লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় ২৪৫ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু বোলারদের তোপে শেষ পর্যন্ত ৩৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ডাচরা।
দিল্লিতে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি নেদারল্যান্ডস অবশ্য তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চাইবে। টস জয়ী অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাটিং করে ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি ও স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনের হাফ সেঞ্চুরিতে বড় রানের পথে এগিয়ে যায়। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওেয়েলের ৪৪ বলে ১০৬ রানের বিশাল ইনিংসে নেদারল্যান্ডসকে ৪০০ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে নেদারল্যান্ডস মাত্র ৯০ রানে অল আউট হয়ে নিজেদের অর্জনকে খাটো করেছে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আবারো স্বমহিমায় ফিরে আসে ডাচরা। ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে অনেক সহজেই তারা বাংলাদেশকে পরাজিত করেছে। ২৩০ রানের টার্গেট পেয়েও বাংলাদেশ তা টপকাতে পারেনি। নেদারল্যান্ডের বোলারদের দারুন পারফরমেন্সে বাংলাদেশের ব্যাটাররা দাঁড়াতেই পারেনি। পল ফন মিকেরেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ২৩ রানে ৪ উইকেট দখল করেছিলেন।
নেদারল্যান্ডসের ৩৫ বছর বয়সী অল-রাউন্ডার সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের গল্পটা একটু ভিন্ন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে কর্পোরেট চাকরিতেই থিতু হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এঙ্গেলব্রেখট। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার তাগিদে তিনি আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং পরবর্তীতে বিশ^কাপে খেলার জন্য ডাক পান। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের দক্ষতার প্রমান দেন। ৩০০ রান করে এবারের বিশ^কাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। এর মধ্যে রয়েছে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার গুরুত্বপূর্ণ ৩৫ রানের ইনিংস দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছে।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে এবারের বিশ^কাপ মাতিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী বাস ডি লিড। ব্যাট ও বল হাতে তিনি সমান পারদর্শীতা দেখিয়েছে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে তার ৫ উইকেট ও ১২৩ রানের ইনিংসে নেদারল্যান্ডস বিশ^কাপের বাছাইপর্বের বাঁধা পেরুতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে মূল আসরে তিনি ৪ উইকেট নিয়েছেন, ব্যাট হাতে করেছেন ৬৭ রান। ১৫.৪৪ গড়ে তিনি সব মিলিয়ে ১৩৯ রান করেছেন। এছাড়া নিয়েছেন ১৬ উইকেট।