চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড় মেলা ২৯ জানুয়ারি উদ্বোধন
‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ কথাটি এখনো মানুষের মুখে মুখে থাকলেও খাটি খেজুরের গুড়ের সংকটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে যশোরের চৌগাছায় ৩দিন ব্যাপী গুড়ের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গুড়ের মেলাকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রেস ব্রিফিং করা হয়।
উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় গাছিদের নিয়ে আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার স্যার মেলার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ৩০ জানুয়ারি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ মেলায় উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরো জানান, যশোরসহ অত্র অঞ্চল খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। গুড়ের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং গাছিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টির লক্ষ্যে গুড়ের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় তিনি গুড়ের মেলার ব্যাপক প্রচারের জন্য গণমাধ্যমে লেখালেখির আহবান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি গুঞ্জন বিশ্বাস, প্রেসক্লাব চৌগাছার সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম উজ্জ্বল, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক রহিদুল ইসলাম খান ও খালেদুর রহমান, সাংবাদিক খলিলুর রহমান জুয়েল, শওকত আলী, ইমাম হোসেন সাগর, ফারুক আহম্মদ, শিপলু খানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গতঃ সেভ দ্য ট্র্যাডিশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুবকর যশোর অঞ্চলের খেজুর গাছ ও সংশ্লিষ্ট গাছিদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্রতিটি গ্রামে গিয়ে গাছিদের নিয়ে শুরু করেন উঠান বৈঠক। এছাড়া খেজুর গাছ রক্ষা ও গাছিদের নিয়ে তিনি আন্দোলনও শুরু করেন।
ওই সময় তিনি তথ্য প্রকাশ করেন অত্র চৌগাছা অঞ্চলে একদশক আগেও খেজুর গাছের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখের বেশী। বর্তমানে প্রায় ৫৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এছাড়া এক দশক আগেও ৪ থেকে ৫ হাজার গাছি থাকলেও নানা কারনে সেই সংখ্যা মাত্র ৮৫০ এ দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন খেজুর গাছ রক্ষা, গাছিদের উন্নয়ন ও গুড় বাজারজাতের নিশ্চয়তা প্রদান করা হলে খেজুর গাছের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। একই সাথে গুড়ের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
খেজুর গাছ নিয়ে তাঁর এই আন্দোলন ও গবেষণার বিষয়টি তিনি সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার কাছে অবহিত করেন। একই সাথে খেজুর গাছ রক্ষা ও গাছিদের উন্নয়নের সহযোগিতা কামনা করেন। সেসময় নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। সেই কার্যক্রমের ধারাবহিকতায় গত বছরের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি খেজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করা হয়। একই সাথে খেজুর গাছ রোপন ও গাছিদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।