প্রনোদনার অপেক্ষায় যশোরের ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা
মালিক উজ জামান, যশোর : ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে যশোরের বোরো চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিপুল ক্ষতির বোঝা সামলে ঘুরে দাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ধানের অপূরণীয় ক্ষতিতে বিপর্যস্ত কৃষক। সেই সঙ্গে শ্রমিক সঙ্কটে মাঠের অবশিষ্ট ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বড় ভরসা বোরোর এমন ক্ষতির পর সরকারের প্রণোদনা সুযোগ পেতে দাবি জানিয়েছেন যশোর অঞ্চলের কৃষক।
যশোর জেলায় মোট ১,৫৮,৫৮০ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। কৃষি বিভাগের মতে, মোট ধানের আবাদ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে অশনির ক্ষতির কারণে ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হবে। কৃষি বিভাগের এসব হিসেবের ভিন্নমত পোষণ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষক। তাদের দাবি যশোরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাস জানান, অশনির প্রভাবে যশোরে বোরোর মোট আবাদের ৯৬৫ হেক্টর আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি ধান ঘরে তোলার তোড়জোড় চলছে। তিনি জানান, ক্ষতির কারণে এ বছর ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হতে পারে।
যশোর জেলা কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা যখন ক্ষতির বিষয়ে এমন দাবি করছেন, তখন মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে পানির মধ্যে চপচপে ভিজে বা ডুবে রয়েছে পাকা ধান। এসব ধানের অধিকাংশ ধানে কল বের বা চারা বের হয়েছে। অনেক ধানে কল বের হয়ে তা সবুজ আকার ধারণ করেছে। যশোর জেলার বাঘারপাড়ার উপজেলার রায়পুর গ্রামের কৃষকরা জানান, এ বছর অনেকেই এখনো পর্যন্ত এক বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে পারেননি। বৃষ্টির পর এসব ধানে কল বা চারা বের হয়েছে। গত দুদিন রোদ ওঠার পর ফেলে রাখা ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে শ্রমিক সঙ্কটে তা সম্ভব হচ্ছে না। অশনির কারণে আমরা যে বিপর্যয়ের কবলে পড়েছি তা থেকে উত্তরণে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। সরকার যদি আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা না করে তাহলে সামনে আমাদের কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে। প্রতিবছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে কৃষকের। তাদের দাবি ২০২০ সালে আম্পানে তারা ব্যাপক ক্ষতিতে পড়ে। ওই সময় ঝড়ে যশোরে ১৩ জনের প্রাণহানিসহ ঘরবাড়ি, ফসল, গাছপালাসহ বিভিন্ন খাতে ২৮৩ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
এ বিয়য়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাস জানান, অশনির প্রভাবে যেসব কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে।