ডিজিটাল প্রযুক্তি টেকসই উন্নয়ন, শিক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য “সীমাহীন সুযোগ” সৃষ্টি করলেও এর নেতিবাচক প্রভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। জাতিসংঘের রাজনীতি এবং শান্তিরক্ষা সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো সোমবার সিকিউরিটি কাউন্সিলে এমন অভিমত পোষণ করে সকলকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কীভাবে মানবতার এবং এ বিশ্বের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারে সকলকে ঐক্যমতে উপনীত হবার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ নেতিবাচক দিকগুলোর ঝুঁকি পরিহার কল্পে কেবলমাত্র কল্যাণকর বিষয়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে গোটাবিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্য জাতিসংঘের সদস্য-রাষ্ট্রসমূহকে উদারচিত্তে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রোজমেরি ডিকার্লো উল্লেখ করেছেন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানবাধিকার এবং মানবিক ওকালতি শুরু করেছে। প্রয়োজনে দ্রুত এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক কিছুকেই সম্ভব করে তুলেছে।
রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই ধারায় সংকট শনাক্ত করার ক্ষমতাকে বাড়িয়েছে, মানবিক সহায়তার পূর্ব-অবস্থান উন্নত করেছে এবং ডেটাচালিত শান্তিনির্মাণ সরঞ্জাম তৈরি করেছে।
এবং আরও ভাল তথ্য এবং প্রারম্ভিক সতর্কতা ডেটা প্রদান করে নতুন ডিজিটাল সরঞ্জামগুলি শান্তি-নির্মাণ এবং শান্তি বিনির্মাণকে শক্তিশালী করেছে-ডিকার্লো যোগ করেছেন।
ডিকার্লো ইয়েমেনে হুদায়দাহ চুক্তি (UNMHA) সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের মিশনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ উন্নত করতে ম্যাপিং এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে “ডিজিটাল মাত্রা থাকতে পারে এমন সংকটগুলি বোঝা, বিশ্লেষণ এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডিজিটাল ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
ঝানু এই রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণকারি অধিকর্তা ডিকার্লো বলেছেন, অধিকন্তু, নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে পারে, বিশেষ করে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের সাথে একিভূত করার ক্ষেত্রে।
উল্লেখ করেন, “বিভিন্ন শান্তি আলোচনায়, আমরা অসংখ্য মানুষের মতামত জানা-শোনার জন্য, তাদের মতামত এবং অগ্রাধিকার শুনতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর সাহায্যে ডিজিটাল সংলাপ ডিকার্লো বলেন, ‘নারী সহ ঐতিহাসিকভাবে অবহেলিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে প্রযুক্তির এই উৎকর্ষসাধন নেয়ামকের ভূমিকা পালন করছে’।
নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রসঙ্গে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উল্লেখ করেন, ‘দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমাতে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কর্মরত শান্তিরক্ষী এবং বেসামরিক কর্মীগণের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করতে পারে। ডিকার্লো বলেন, “শান্তি রক্ষায় আরো কার্যকরভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের এই কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একইসাথে ঝুঁকি অথবা বিপদ সম্পর্কে আগাম সতর্কতায়ও নির্ভূল ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এই সরঞ্জামগুলি তথ্যকে কল্পনা করতে এবং নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলি জানাতে ডেটা-সমৃদ্ধ বিশ্লেষণ জানাতেও সাহায্য করে-যেমনটি কলম্বিয়ার সাম্প্রতিক ভার্চুয়াল বাস্তবতা উপস্থাপনা দ্বারা চিত্রিত হয়েছে, রাষ্ট্রদূতদের জন্য সরেজমিনে জাতিসংঘের কাজকে হাইলাইট করে।
আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ডিকার্লো গভীর উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারে জাতীয় এবং অ-রাষ্ট্রীয়-স্পন্সরের ঘটনা ২০১৫ সাল থেকে প্রায় চারগুণ হয়েছে।
“গভীর উদ্বেগের বিষয় হল অবকাঠামো যা স্বাস্থ্য এবং মানবিক সংস্থাগুলির মতো প্রয়োজনীয় জনসেবা প্রদান কওে সেগুলোতে হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে’’- তিনি বলেন।
একই সময়ে, প্রাণঘাতী অস্ত্রগুলির যখন অপপ্রয়োগ ঘটে তখন মানুষের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যের আলোকে ডিকার্লো বলেন, ‘মানুষের সম্পৃক্ততা ছাড়াই প্রাণ সংহারের ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন/অস্ত্র রাজনৈতিক ভাবেও অগ্রহণযোগ্য, নৈতিকভাবে বিদ্বেষপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।’ ‘অরাষ্ট্রীয় ধরনের লোকজন অর্থাৎ দুর্বৃত্তরা নিজেদের এজেন্ডার বাস্তবায়নে স্বল্প খরচে এবং চাইলেই পাওয়া যায় এমন প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরী করা অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। ইতিপূর্বে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন যে, আল ক্বায়েদার মত সন্ত্রাসী চক্র নিজেদের অপকর্ম চালাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসের প্রতি লোকজনকে আকৃষ্ট করছে, তাদের পরিকল্পনার প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহের জন্যেও এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে।