প্রাণভিক্ষা নাকচ হলেই বন্দীকে কনডেম সেলে রাখা যাবে সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে
ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৪ (বাসস) : কোন ফাঁসির আসামীর প্রাণভিক্ষা নাকচ হলেই কেবল তাকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে বলে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজ গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতের রায়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিনজনের উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পূর্বে কনডেম সেলে বন্দী রাখার বিষয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত রুল ও নির্দেশনা দেয়। মৃত্যুদন্ডের সাজা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন অবৈধ হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কতজন নারী ও পুরুষ কনডেম সেলে বন্দী আছে তার একটি তালিকা আদালতে দাখিল করতে আইজি প্রিজনের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।
এডভোকেট শিশির মনির জানান, ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় ঘোষনা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না। রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে আসামির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি, প্রশাসনিক অনান্য কার্যক্রম ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরই মৃত্যুদন্ডের রায় চূড়ান্ত হয়। এরপর নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা যাবে।
এডভোকেট শিশির মনির বলেন, রায়ে বলা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত কোন ব্যক্তির সংক্রামক জনিত সমস্যা বা অন্য কোন বিশেষ কারণে তার শুনানি নিয়ে তাকে নির্জন কক্ষে আটক রাখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য মামলায় যেরূপ হাইকোর্ট বিভাগে আপিল ও জামিন শুনানি হয়, শুনানি শেষে আদেশ হয়, তেমনি মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তি আপিলের পাশাপাশি জামিনের আবেদন করতে পারবেন। উপযুক্ত আদালত তার জামিন আবেদন বিবেচনা করতে পারবেন। রায় দেশের জেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, মৃত্যুদন্ডে দন্ডিতের বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে কোন তথ্য চাইলে তা যেন দেয়া হয়। একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ড সংক্রান্ত মামলার তথ্য সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে পরিবেশন করার জন্যও আদেশ দেয়া হয়েছে।
এডভোকেট শিশির মনির জানান, মামলাটির শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, কারা আইন নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজ রায়ে আদালত বলেন, রায়ের ফাইন্ডিংস ও পর্যবেক্ষণ নতুন আইনটিতে সংযুক্ত করতে যেন বিবেচনা করা হয়। রায়ে বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে কনডেম সেলে আটকদের সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপিল আবেদন করার সিদ্ধান্তের কথা আজ জানান এটর্নি জেনারেল।
রিট আবেদনকারীরা হলেন-চট্রগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।