শীর্ষ নিউজ

হাটহাজারীতে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্যের জমিতে ঘর নির্মাণের অভিযোগ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত নুসরাত ইয়াছমিন টিসা নামে এক সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী নিয়ে জোরপূর্বক প্রতিবেশীর জায়গা দখলে করে পাকাঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নুসরাত ইয়াছমিন টিসাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ মে চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ (সি আর (৫০৪/২৪) দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শফিউল আজম চৌধুরী (৫৬)।

আদালতের নির্দেশে অভিযোগটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট।

অভিযুক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের নাছির চৌধুরী বাড়িতে। তার বাবার নাম মৃত আবুল বাশার। আদালতে করা ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভূমি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ৪(১) (ক), ৭(১) (২) /১০/১৬ ও ২০ অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগকারী শফিউল আজিম চৌধুরীও একই বাড়ির বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে।

আদালতের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা শাখার একটি টিম। পুলিশ কর্মকর্তা নুসরাত প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক প্রতিবেশীর জায়গায় পাকাঘর নির্মাণের সত্যতা পেয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই’র একটি সুত্র দেশ রুপান্তরকে নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা নুসরাত ইয়াছমিন টিসার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রসঙ্গে পিবিআই জেলা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা করে বলেন, “তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়।’

নিজের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক প্রতিবেশীর জায়গা দখল করে পাকাঘর নির্মাণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ কমিশনার নুসরাত ইয়াছমিন টিসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিরোধীয় জমিতে আমাদের স্বত্ব আছে। এটা দালিলিকভাবে উপস্থাপন করতে পারব। বিষয়টি যেহেতু পিবিআই তদন্ত করছে তাই মন্তব্য করা উচিত হবে না। রাতের আঁধারে জোরপূর্বক প্রতিবেশীর জায়গায় পাকাঘর নির্মাণের অভিযোগ সঠিক নয়। তদন্তে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।’

আদালতে দায়ের করা ফৌজদারি অভিযোগে বলা হয় পশ্চিম ফরহাদাবাদ মৌজার অধীন বি. এস ৪৫০ নম্বর খতিয়ানের বি. এস ১৭৭০, ১৭৬৫ এবং ১৭৬৯ দাগের জমি অভিযোগদাতার বাবা প্রয়াত আবদুল জলিলের নামে বি. এস চূড়ান্ত জরিপ আছে।
উক্ত তিন দাগে তাদের পৈতৃক জমিজমা অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

গত ৩ মে গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের দিয়ে বি. এস ১৭৭০ দাগের জমির মাটি খনন শুরু করান এএসপি নুসরাত ইয়াছমিন টিসা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করলে অভিযোগদাতার ডাক্তার মাহবুব আলম চৌধুরীকে মারধরের চেষ্টা করেন তারা।

এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা নুসরাত ইয়াছমিন টিসা ও তার সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা শফিউল আজিম চৌধুরী এবং তার ভাইদের প্রাণনাশের এবং নারী নির্যাতন মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।

পরে এ ঘটনায় অভিযোগদাতার ভাই ডাক্তার মাহবুব আলম চৌধুরী হাটহাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (১৫৭, তাং ৩/৫/২৪) করেন। থানায় জিডি করার পর দুইদিন কাজ বন্ধ রাখলেও পরের দিন (৫ মে) গভীর রাতে বি. এস ১৭৭০, ১৭৬৫ ও ১৭৬৯ দাগের জমিতে বিদ্যমান গাছপালা কেটে ফেলেন অভিযুক্তরা।

এখানেই শেষ নয় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে তৈরি করা দৃষ্টিনন্দন পুকুর ঘাটের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে জোরপূবর্ক বি.এস ১৭৭০ দাগের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে অভিযুক্ত এএসপি নুসরাতের নিয়োগ করা লোকজন দিয়ে একতলা বিশিষ্ট ভবনের পিলারসহ ছাদ তৈরি করে ফেলেন।

অভিযোগদাতার দাবি, আলোচ্য তিনটি বি. এস দাগের জমি আর. এস ২৪৭৮/২৪৭৯ দাগের অর্ন্তভুক্ত। তার (অভিযোগদাতা) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ১৯৬৩ সালের ৩১ অক্টোবর এবং ১৯৬৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনকৃত যথাক্রমে ৩৮২২ ও ১৩১৭ নম্বর দলিলমূলে স্বত্ববান হন। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সুত্রে উক্ত তিন দাগের জমির স্বত্ববান হন মো.শফিউল আজিমসহ তার ভাই বোন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button