ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি, অব্যাহত রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা বিএনপির ভেতরও এজেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই সবাইকে ‘অ্যালার্ট’ থাকতে হবে। শক্ত হাতে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের মাথা পালিয়েছে, কিছু কিছু ছোটমাথাও পালিয়েছে, কিন্তু শরীরের লেজ অবশিষ্ট রয়ে গেছে। তারা গভীর ষড়যন্ত্র করছে। শক্ত হাতে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এটা আমার নির্দেশনা। দলের সুনাম ও জনগণের আস্থা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
এ সময় ৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। গাজীপুর ছাড়াও ঢাকা এবং নারায়নগঞ্জ জেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংঠনের নেতাকর্মীরা এ ভার্চুয়ালর কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে মহানগরীর চৌরাস্তা এলাকার সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, মেয়র মজিবুর রহমান ও আক্তারুল আলম মাস্টার।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৭ বছর বহু অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের ঐক্য ও জনগণের আস্থাকে এ পর্যন্ত ধরে রেখেছেন। এখন যদি কেউ নিজের স্বার্থকে হাসিলের জন্য এই আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করে; তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তা অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে, এখানে প্রধান প্রতিপক্ষ নেই, অথবা দুর্বল হয়ে গেছে, নির্বাচন খুব সহজ হবে। ‘নো নো নো অ্যান্ড নো…; এই নির্বাচন অতীতের যে কোনো নির্বাচন থেকে অনেক কঠিন হবে। তাই নিজেদের প্রস্তুত করুন। নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে যেন আমরা পার হতে পারি। সেইভাবে নিজেদের প্রস্তুত করুন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিকে মানুষ পছন্দ করে এটা অনেক রাজনৈতিক দলসহ অনেকের হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আপনারা খেয়াল করে দেখুন, যারা এ দলের সঙ্গে বহু বছর ধরে জড়িত। দেশের ভেতর এবং বাইরে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই দলের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র হবে তখন ধরে নিতে হবে ষড়যন্ত্র শুধু দলের বিরুদ্ধেই নয়, এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে বিএনপির দিকে। তাদের অনেক প্রত্যাশা। একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি যখন কোটি মানুষের প্রত্যাশা থাকে; তখন দায়িত্ব অনেক বড় হয়ে ওঠে। তিনি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, জনগণ বিশ্বাস করে ভালো কিছু করতে পারলে বিএনপিই করতে পারবে। আর এটাই বিএপির সফলতা।
তারেক রহমান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো- মানুষের আস্থা অজন করা। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। কারণ, বিএনপির একজন কর্মী তার নিজ এলাকার রাষ্ট্রদূত। তাকে দিয়েই মানুষ বিএনপিকে চিন্তা করে। কাজেই বলবো- জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সাথে রাখুন।’
তিনি বলেন, আমরা জাল ভোট দিয়ে, কারচুপি করে, নিশি ভোটে, জোর করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। মানুষ মুক্তভাবে ভোট দিবে এমন একটি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপিকে বিবেচনা করবে।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১দফা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৩১ দফাকে নিয়ে যেতে হবে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে। সমাজের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আমাদের যেতে হবে। কারণ, বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যতবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে; প্রতিবার চেষ্টা করেছে এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবতন ঘটাতে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভালো থাকে। তাই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর জনগণের যে আস্থা, বিশ্বাস রয়েছে তা যে-কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। আস্থা নষ্ট হয় এমন কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না।