সুনামগঞ্জে ৪ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করছে ডিবি
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় একই পরিবারের ৪ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। গত ১২ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সদর জোনে বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইনের ৩১ ধারামতে ঐ মামলাটি দায়ের করেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের ছমেদনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের পুত্র বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা বুলবুল। মামলা নং সিআর ৯১৬/২০২৪ (সদর)। মামলায় সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ৩ পুত্র আলী আহমদ,জামির হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে তাজুল ইসলাম ছোট মিয়া এবং রঙ্গারচর ইউনিয়নের ছমেদনগর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার পুত্র নাজিম উদ্দিনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, ইসলামপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার পুত্র দেলোয়ার হোসেন ওরফে তাজুল ইসলাম ছোট মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ মালয়েশিয়া রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে যাচ্ছে। এ সুযোগে এলাকার বিভিন্ন লোকজনকে মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসে পাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সহোদর ও আত্মীয় স্বজনরা,স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অন্যদিকে তাদের প্রতারনা ও লোভের বশবর্তী হয়ে অনেক লোকজন বিদেশে গিয়ে নানাস্থানে দালালচক্রের হাতে আটক হয়ে অমানবিক নির্যাতনের পাশাপাশি প্রতারিত হচ্ছেন। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ প্রতারকচক্রটি আত্মীয়তার পরিচয়ে গোলাম মোস্তফা বুলবুলের ছেলে মোঃ উমর ফারুককে মালয়েশিয়া প্রেরনের কথা বলে প্রথমে নগদ ২ লক্ষ টাকা পরবর্তীতে আরো ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা গ্রহন করে। ঐ সময় সাফা ট্রেভেলস এন্ড ট্যুরিজমের মাধ্যমে মোট ৯ জনকে তারা মালয়েশিয়া পাটায়। কিন্তু উমর ফারুক স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ী জমালেও দেলোয়ার হোসেন ওরফে তাজুল ইসলাম ছোট মিয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাকে অন্যত্রে কাজে প্রেরণ করা থেকে বিরত থেকে মালয়েশিয়ায় নিজের কাছে রেখে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে বাড়ীতে আরো ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে উমর ফারুকের পিতা গোলাম মোস্তফা বুলবুল,প্রতারক আলী আহমদের কাছে এক লাখ টাকা প্রদান করেন। এমনিভাবে একাধারে তিন দফায় মোট ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও ঐ প্রতারকচক্রটি মালয়েশিয়ায় উমর ফারুককে কাজে না লাগিয়ে চতুর্থ দফায় আরো ২ লক্ষ টাকা দেয়ার দাবী করে তার উপর উপর্যুপরী শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। ফলে অনন্যোপায় হয়ে প্রতারিত বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা বুলবুল,ছেলেকে উদ্ধার ও পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের দাবীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের মাধ্যমে সালিশ বৈঠক করলে প্রতারকচক্রটি টাকাসহ উমর ফারুককে দেশে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু সালিশের রায় মোতাবেক গত ১৬ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় ইসলামপুর গ্রামে গেলে প্রতারকরা টাকা ফেরত প্রদানতো দূরের কথা উমর ফারুককে বিদেশে নেয়নি বলে অস্বীকার করে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতারিত বিএনপি নেতা চিহ্নিত ঐ চক্রটির বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। রঙ্গারচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, শুধু গোলাম মোস্তফা বুলবুলই নয় চিহ্নিত এ মানবপাচারকারী চক্রটির বিরুদ্ধে আরো একাধিক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলে প্রতারকচক্রটি বারবার সময় নিয়ে কালক্ষেপন করছে। এদিকে মামলাটি তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই এম.এ আজিজকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের তারিখমতো আগামী ২রা মার্চের মধ্যে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে প্রতারিত বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা বুলবুল মানবপাচারকারী চক্রের কবল থেকে তার ছেলেটিকে উদ্ধারে সক্ষম হবেন বলে এলাকাবাসী মনে করেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।