নীরবে চলে গেল আলোকিত মানুষ প্রফেসর শরীফ হোসেনের মৃত্যু বার্ষিকী
মালিকুজ্জামান কাকা
গত ৪ ফেব্রুয়ারী যশোরের আলোকিত মানুষ প্রফেসর শরীফ হোসেনের মৃত্যু বার্ষিকী ছিল। বলার মত কিছুই হয়নি ওর জন্মভূমি যশোরে। নীরব ছিল যশোর। অথচ প্রানবন্ত এই সাদা মানুষটি অনেক ভালো কাজের মহীশুর।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শরীফ হোসেন ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারী যশোর শহরের খড়কীতে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শফিউদ্দীন আহম্মেদ এবং মাতা মেহেরুন নেসা খাতুনের একমাত্র সন্তান শরীফ হোসেন।
অধ্যাপক মো: শরীফ হোসেন ব্যক্তিগতজীবনে তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রীর নাম বেগম ফরিদা হোসেন।
২০০৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারিতে ইন্তেকাল করেন তিনি। ১৯৫৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বৎসর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে ১৯৯১ সালে মাইকেল মধুসূদন কলেজ [এম এম কলেজ] থেকে অধ্যক্ষ হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে শ্রেষ্ঠ পাঠাগার সংগঠক হিসেবে পুরস্কৃত করে। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য ২০০২ সালে একুশে পদ প্রাপ্ত হন তিনি।
১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা ভাষা সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। এর ২৩ বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি চত্বরে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন উপলক্ষে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন প্রফেসর শরীফ হোসেন।
এ ছাড়া তিনি এ উপমহাদেশে প্রথম ১৯৭৩ সালে যশোরে আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করে বই বিপ্লবের জাদুকর হয়েছিলেন। ঢাকা-কলকাতায় যখন বইমেলা শব্দটির প্রসার ঘটেনি, তখন শরীফ হোসেনের বইমেলায় লোকের ভিড়। এ ছাড়া তিনি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, বই ব্যাংকসহ পাঠাগার আন্দোলনে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ, সৃজনশীল কাজ করে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
লাইব্রেরি গবেষক ড. মোফাখখার হোসেন খানের গবেষণা থেকে জানা যায়, এ উপমহাদেশে প্রথম ১৮৫১ সালে যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি পl
১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা ভাষা সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। এর ২৩ বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি চত্বরে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন উপলক্ষে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। সেই থেকে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন প্রফেসর শরীফ হোসেন।
এ ছাড়া তিনি এ উপমহাদেশে প্রথম ১৯৭৩ সালে যশোরে আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করে বই বিপ্লবের জাদুকর হয়েছিলেন। ঢাকা-কলকাতায় যখন বইমেলা শব্দটির প্রসার ঘটেনি, তখন শরীফ হোসেনের বইমেলায় লোকের ভিড়। এ ছাড়া তিনি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, বই ব্যাংকসহ পাঠাগার আন্দোলনে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ, সৃজনশীল কাজ করে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
লাইব্রেরি গবেষক ড. মোফাখখার হোসেন খানের গবেষণা থেকে জানা যায়, এ উপমহাদেশে প্রথম ১৮৫১ সালে যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়।
মতামত আছে, ১৮৫৪ সালে যশোরের জেলা কালেক্টর মি. আরসি রেকস প্রথম যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালে যশোর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন শরীফ হোসেন ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর। ১৯৬৭ সালে তিনি যশোর এমএম কলেজের ছাত্র ড. মুস্তাফিজুর রহমান, রাশেদ আহমেদ, সিরাজুল হক বুলবুল, মশিউল আযমসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন।
এই বাহিনীকে নিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো দ্বিতল ভবনে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেছিলেন। প্রথম মেলায় পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে তিনি ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি ৫২টি বইমেলার আয়োজন করেছেন। যশোরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হাটবাজার ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলসহ দক্ষিণাঞ্চলে তিনি বইমেলার আয়োজন করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৮টি কাঠের বক্সে বই বোঝাই করে ট্রাকযোগে শরীফ হোসেন বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগানোর জন্য হাটবাজার ও গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন।
অনেকে তাঁকে যাত্রাপার্টি বলে টিটকারি দিয়েছেন। তিনি তা কবুল করে বই যাত্রাপার্টি গঠন করেছেন। বই মানুষের বুদ্ধি বাড়ায়, বই জাগ্রত করে ইত্যাদি বলে ক্যানভাসারের মতো তিনি হাটবাজারে লেকচার দিয়েছেন। ব্রিটিশরা তাদের উৎপাদিত চা বাজারজাত করার জন্য হাটবাজারের মানুষকে বিনা মূল্যে চা পান করিয়েছে। বাড়ি ফেরার সময় এক প্যাকেট চা দিয়েও দিয়েছে। শরীফ হোসেন এই ফর্মুলা আত্মস্থ করে এক বইকে বহু বইয়ে পরিণত করার লক্ষ্যে বইমেলার আয়োজন করেছেন। গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বইয়ের গুণগান করে তিনি হাটবাজারের মানুষদের গান শুনিয়েছেন। প্রদর্শন করেছেন অভিনব যন্ত্রপাতি। বই নিয়ে ভালুক, গরু, গাধা ওই যন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করছে আর মানুষ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। শরীফ হোসেন ১৯৭৩ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েন উদ্দিনের সহযোগিতায় যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। বইমেলার পাশাপাশি তিনি গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বই ঋণ দেওয়ার জন্য এ দেশে প্রথম ১৯৭২ সালে যশোর পাবলিক লাইব্রেরিতে বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে খুলনা বিএল কলেজে, ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে, ১৯৯০ সালে যশোর সরকারি এমএম কলেজে তিনি বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে পাঠাগার আন্দোলনে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ২০০১ সালে সরকার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ পাঠাগার সংগঠক হিসেবে শরীফ হোসেন পুরস্কৃত হন। ২০০২ সালে গ্রন্থাগার আন্দোলনের জন্য তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। দেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের এটিই প্রথম স্বীকৃতি। যশোরের খড়কি এলাকার এই কৃতী সন্তান ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন।