মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর শহরে আলোচিত যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মাস্টার মাইন্ড মানুয়ার ভাইপো রায়হান, ইছামীর ও আল আমিন ওরফে চোর আল আমিনকে আটক করেছে র্যাব-৬ ও জেলা পুলিশ। যশোর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার), পিপিএম এই তথ্য দেন। আসামীদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহ্নত ২টি গাছিদা, ১টি চায়নিজ কুড়াল ও ১টি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। কোতয়ালী মডেল থানার এস আই আনছারুল হক ও জেলা গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে মামলার ১নম্বর আসামী ও মাস্টার মাইন্ড বিএনপি নেতা শামীম আহম্মেদ মানুয়ার ভাইপো রায়হান (পিতা- ফরিদ মুন্সী) ও ৭নম্বর আসামী ইছা মীর (পিতা- বাবু মীর) কে আটক করা হয়। আল আমিন শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার রইস উদ্দিনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ এম নাজিউর রহমান। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে আল আমিনকে আটকের পর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী রায়হানের বিরুদ্ধে ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি মাদক মামলা, ২টি চাঁদাবাজী মামলাসহ ৪টি মামলা বিচারাধীন আছে।
এদিন বেলা দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশের পক্ষথেকে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি আটকের বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিং হয়। পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার জানান, নিহতের ভাই মনিরুজ্জামান বুধবার একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৫৩। এরপর পর অভিযান শুরু হয়। শহরের টিবি ক্লিনিক পাড়া ও খুলনার দিঘলিয়া বারাকপুরে অভিযান চালিয়ে রায়হান ও ইছা মীর কে আটক করা হয়। নিহত ধনীর বিরুদ্ধে ২টি হত্য, ১টি অস্ত্র, ১টি বিস্ফোরক, ১টি সন্ত্রাস বিরোধীসহ মোট ১২টি মামলা চলমান। জাতীয়তাবাদী যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনী মূলত নিজ দলীয় বিএনপি’র আভ্যন্তরীন কোন্দলে খুন হয়েছেন। কেননা ধনী খুনের মাস্টার মাইন্ড শামীম আহমেদ মানুয়া বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। প্রেসব্রিফিংয়ে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: বেলাল হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো: ফিরোজ কবীর, ওসি (ডিবি) রুপণ কুমার সরকার, ওসি কোতয়ালী মডেল থানা তাজুল ইসলাম প্রমুখ। আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছিলেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির ওসি রুপণ কুমার সরকার। মামলায় বিএনপি নেতা শামীম আহমেদ মানুয়াসহ আটজনকে আসামি করা হয়। গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর জেলা যুব দলের সিনিয়র সহ সভাপতি বদিউজ্জামান ধনিকে নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
যশোরে প্রকাশ্যে বাড়ির সামনে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধনিকে হত্যার ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন নিহতের ভাই মনিরুজ্জামান মনি। বুধবার রাতে তিেিনএ মামলা করেন। রাত ১১টার পর বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার ওসি তদন্ত শেখ মনিরুজ্জামান। নিহত ধনি শহরের চোপদারপাড়া আকবরের মোড় এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে। অভিযুক্তরা হলো, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক ফুড গোডাউনের সামনে আশ্রম রোডের আব্দুল আলীমের ছেলে আকাশ, মোহাম্মদ ফরিদের ছেলে রায়হান, শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে বিএনপি নেতা শামীম আহমেদ মানুয়া, টিবি ক্লিনিক ফুড গোডাউনের পাশের মিরাজ বিশ্বাসের ছেলে মন্টু, টিবি ক্লিনিক এলাকার রইস উদ্দিনের ছেলে আল আমিন ওরফে চোর আল আমিন , আফসারের ছেলে মিলন, শংকরপুর হারান কলোনীর উত্তর পাশের বাবু মীরের ছেলে ইছা মীর এবং চোপদারপাড়া রোডের মৃত হুজুর ইয়াসিনের বাড়ির পাশের লাভলুর ছেলে রিজভী। বাদীর অভিযোগ, কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন একই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত। ইয়াসিনের শ্বশুর বিএনপি নেতা শামীম আহমেদ মানুয়ার সাথে যুবদল নেতা ধনির রাজনৈতিক বিরোধ ছিলো। ইয়াসিন খুনের পেছনে ধনির হাত আছে এই সন্দেহে ধনিকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে মানুয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ধনিকে খুনের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ধনিকে তার বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে খুন করে মানুয়ার ভাগ্নে রায়হান ও তার সঙ্গীরা।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল বেলাল হোসাইন জানান, ধনি হত্যাকান্ডের পরপরই আসামি আটকের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন জন আটক হয়েছে। বাকিরাও শীঘ্রই আটক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়া চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ের আকবর আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম বুধবার রাতে কোতয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শামীম আহমেদ মানুয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। অপর অভিযুক্তদ্বয় হলো, মানুয়ার ভাগ্নে রায়হান ও আলীমের ছেলে আকাশ। শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আকবরের মোড়ে তার একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আছে। যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনি খুন হওয়ার কিছু সময় আগে তিনি ওই স্থান থেকে চলে যান। মূলত আসামিরা তাকে খুঁজতেই সেখানে যায়। এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তাকে না পেয়ে বদিউজ্জামান ধনিকে পেয়ে খুন করে। ১২ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে বেজপাড়া সরকারি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ধনি যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। ওই মামলায় কয়েকদিন আগে তিনি জেল থেকে জামিনের মুক্তি পান।