ঘুনী গ্রামে মনিরুল গংয়ের তান্ডবে দিশেহারা আসমা রেনু কাজল
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া গ্রামে প্রভাবশালীদের তান্ডবে কয়েকটি পরস্পর আত্মীয় পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নগদ টাকা, গরু, সাংসরিক আসবাবপত্র প্রকাশ্য দিবালোকে নিয়ে গেছে। নারী পুরুষকে মারধোর করে আহত করলেও পুলিশ নির্বিকার। দূর্বত্তদের তান্ডবে নিরাপত্ত্বাহীন হয়ে এসব পরিবারের সদস্যরা এখন নিজ এলাকার বাইরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বরকেও তারা তোয়াক্কা করেনা। এই চক্রের মূল হোতা ঘুনী শাখারীপাড়ার মৃত আমিন মিয়ার পুত্র মনিরুল ইসলাম মনির (৩৪)।
ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, ঘুনী শাখারীপাড়ার আবু জাফরের কন্যা আসমা আক্তার কে মনিরুল ইসলাম মনির বিয়ে নাটকে প্রায় দুই বছর শারিরীক ভোগ দখল করে। এরপর তার নগদ ৮,১০,০০০ টাকা নিয়ে নেয় পাঁচ দফায়। ঐ টাকা বিদেশ থেকে বোনেরা আসমার একাউন্টে পাঠিয়েছিল। এটা জানতে পেরেই মনির তা হাতিয়ে নেয়। পরে আসমা জানতে পারে তার বিয়েটি আদতে রেজিস্ট্রিই হয়নি। অথচ সেই বিয়েটি সকাল ১০টা থেকে ১২ টার মধ্যে মনিরের বাড়িতেই বিয়েটি হয়েছিল। সেই বিয়ের স্বাক্ষী ছিল আসমার আপন চাচা রফিকুল ইসলাম, মনিরের বোন ময়না, অবসরপ্রাপ্ত এনএসআই পরিচয়ধারী একজন। বিয়েটি মনিরের ভাই অন্ত’ুর শশুর। তবে তার নাম ঠিকানা আসমা জানেনা। দেখলে চিনবে। দুই লক্ষ টাকা কাবিননামায় বিয়েটি হয়েছিল। বিয়েটি হয়েছিল ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল। অস্বীকার করে এক সপ্তাহ পর। বিয়ের কাবিননামাটি চাইলে সে তা না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে। আসমার দুইটি গরু দেড়লক্ষ টাকা দরে বিক্রি করে তা আত্মসাৎ করে। সে ঘটনাটি গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিসহ অনেকেই জানে। তবে প্রত্যেক লেনদেনে ছিল আসমার আপন চাচা রফিকুল। সে এলাকায় ভূয়া পলিপাস প্ইালস ডাক্তার নামে পরিচিত। তার ডাক্তারখানাটি বর্তমানে যশোর খুলনা মহাসড়কের আফিল অটো ইটভাটার সামনে জামতলায়। অভিযোগ রয়েছে এই ভূয়া ডাক্তারের অপ চিকিৎসায় একজন রুগী ভারতে মেরে ফেলে। পরে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। এই না পাশ ডাক্তার ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয় আসমার পরিবারেরর কাছ থেকে বিবাহের কাগজপত্র এনে দেবে বলে।
বিয়ে ও টাকা নিয়ে কথাবলায় মনিরুল ও তার দোসর রফিকুলসহ অন্যরা আসমা, আসমার ভাই ফারুখ ব্যাপারীর স্ত্রী গুলনাহার খাতুন কাজল, আসমার বোন রেনুকে মেরে জখম করে ঘরের সকল আসবাবপত্র নিয়ে যায়। এমনকি অন্ধ ফারুখ ব্যাপারীর গরু বিক্রির ৩২ হাজার টাকা যা ঘরে ছিল তাও লুট্ করে নিয়ে যায়। সকল ঘর থেকে ১৫টি কম্বল, স্বর্নের কয়েকটি গহনা, ফার্নিচার, আসবাবপত্র দিনে দুপুরে নিয়ে যায়। এসব নিয়ে আছমা আক্তার বাদি হয়ে একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১) ধারায়। যার নম্বর ৭৬০/২১। এছাড়া এ্যাডভোকেট রফিকুর ইসলাম বাদি হয়ে আরো একটি মামলা করেছেন যার নম্বর ৭৬/৮৬২। তারিখ ১৮/০৮/২১। মামলা উঠিয়ে নিতে প্রচন্ড চাপ সৃস্টি করছে মনির গং। এসব বিষয়ে ২০২১ সালের ৮ আগষ্ট একটি সংবাদ সম্মেলন করেও পার পাচ্ছেননা। সর্বশেষ ৫সেপ্টেম্বর শহরের কাজ সেরে বাড়ি যাওয়ার পথে বিকালে মনির রাস্তায় দাড়িয়ে হুমকি দেয় মামলা না তুলে নিলে আগে যেমন মেরেছি তেমনি মেরে বাঁচিয়ে না রেখে লাশ গুম করে দেবো। তবে এসব নিয়ে পারত পক্ষে গ্রামবাসী কোন কথাই বলে না। কেননা তারা মনির ও তার বাহিনীকে বড্ড ভয় পায়।
তবে গ্রামবাসী জানায়, মনির একই সাথে অবৈধ মাদকদ্রব্য ইয়াবা কারবারী, নারী পাচারকারী ও অর্থ লুটপাটকারী। সে কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নারী সাপ্লাই দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে রাতারাতি জিরো থেকে হিরো বনে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। নারী পাচার, অন্যের অর্থ আত্মসাৎ, চাকুরী দেবার প্রলোভনেও অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করে। ঘুনী গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দীনের পুত্র আক্কাছের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, আনছারের তিন লক্ষ টাকা, ঘুনী বাজারের সিমেন্ট ব্যবসায়ির কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে। এমনিভাবে নিজ গ্রাম ও আশপাশ থেকে সে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় এককোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এসব কথা গ্রামের মানুষজনের মুখে মুখে আলোচনা হচ্ছে। ১১/০৫/২২ তারিখে বাহিনী প্রধান মনিরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামবাসির মুখে শোনা যায়।