যশোরে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগ নেতারা ফিল্ডে
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ রেসে এখন ঢাকায়। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৮ নেতা তদ্বির-তৎপরতায় ব্যস্ত। যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রথম দিন দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৪ জন নেতা। এরমধ্যে ৩ জন নারী। রোববার ঢাকার ধানমন্ডিস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে তারা মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
তারা হলেন, বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মজিদ, আব্দুল খালেক, বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী রায়হান, মেহেদী হাসান মিন্টু, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবু সেলিম রানা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক হারুণ-অর-রশিদ, সাবেক এমপি আলী রেজা রাজুর স্ত্রী ফিরোজা রেজা, সাবেক এমপি আলেয়া আফরোজ (শরীফ আব্দুর রাকিবের স্ত্রী), যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজু জামান, বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হোসেন। সোলাইমান ফরম সংগ্রহ শেষে তা পূরণ শেষে প্রথম দিনই জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র কেনা যাবে। এরপর দল একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাড. আসাদুজ্জামান আসাদ, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজুজ্জামান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সোমবার প্রথম দিনে ৯ জন সদস্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দু’দিনে ১৬ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। ৮ সেপ্টেম্বর সংগ্রহ এবং জমাদানের শেষ দিনের মধ্যে যে কোন দিন এই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে তারা জানিয়েছেন। ঢাকা ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই কার্যক্রম চলছে।
১৭ অক্টোবর যশোরসহ ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নে এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতা ফিল্ডে। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, পাঁচজন সহসভাপতিসহ জেলা পর্যায়ের ২০ নেতা রয়েছেন। রয়েছেন নারী প্রার্থী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল রয়েছেন। এর বাইরে চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান, বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলাইমানসহ আরও কয়েক নেতা যোগাযোগ ও তদবিরে। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অতীতে এই পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও সেবার ধারা অব্যাহত রাখতে চান তিনি। এজন্য দল তাকে ফের মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা তার। তবে ওই পদে থাকা কালীন তার বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম ও গাছলুটের অভিযোগ আছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছাত্রলীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা ইউপি চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনে কারাবরণকারী এই নেতা তার অতীত রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে টন্ডার বিরোধে লাঞ্ছিত, পারিবারিক বিরোধে এক বাড়ি লোকজন নিয়ে হামলার বিতর্কে আছে তার। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক পরীক্ষিত নেতা।
ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল খালেক। পদের মোহে রাজনীতি করেননি তিনি। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী আব্দুল মজিদ সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগকে ধ্যান জ্ঞান করে তিনি এবার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চান। মোহিত কুমার নাথ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থানেরও ঘটনা রয়েছে। তারপরও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা তার।
যশোর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, খসড়া ভোটার ১৩১৯। প্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ১০০৭ জন ও নারী ভোটার ৩১২ জন। যশোরসহ দেশের ৬১ জেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে। এই নির্বাচনে ব্যবহার হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ তারিখে বাছাই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রদানের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র বিতরণের পর আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।