আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

যশোর রেজিস্ট্রি অফিস নকলনবীশ সাইফুলের জালিয়াতির তদন্ত শুরু


মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ সাইফুল ইসলামের জালিয়াতি তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগামী ২০ সেপ্টম্বর তারা ২য় দফা বৈঠকে বসরেন। এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা সভা করেন। কমিটিকে ১৫ কার্য দিবস সময় বেধে দেয়া হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব ঝিকরগাছার সাব রেজিস্ট্রার নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভলিউম বইয়ে জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করার অভিযোগে গত ২৪ আগস্ট সাইফুল ইসলামকে সাসপেন্ড করা হয়। সাইফুল একই ধরনের অপরাধ আগেও দুইদফা সাসপেন্ড হন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নকলনবীশ সাইফুল ইসলাম শার্শা উপজেলার ১৯৯০ সালের ৫১০২ নম্বর দলিলের দাগ নম্বর পরিবর্তন করে। দলিলে এসএ দাগ ছিল ২২২৭ সেটি ঘষে করে ১৮০১। হাল দাগ ছিল ৩৬৭৩ সেটি করেছে ৪১৭৮। এই দলিলটি ৬৮ নম্বর ভলিউম বইতে ছিল। সাইফুল নকল তোলার জন্য রেকর্ড রুম থেকে ভলিউম বইটি সংগ্রহ করেন। জমির বিক্রেতা ছিলেন খোদেজা খাতুন আর ক্রেতা আব্দুল হাই। সাইফুল সাব রেজিস্ট্রার ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর নিজেই করে নকল তোলার জন্য জমা দেন। আইনত কোন নকলনবীশ আবেদন করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমে যাতায়াত সাইফুল চক্রের। এই চক্র অর্থের বিনিময়ে একটি সরকারি অফিসের রেকর্ডপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। যা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। এদের লাগাম টানার কেউ নেই! বছরের পর বছর ধরে এই অপকর্ম চলে আসছে। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
অনুসন্ধানে বের হয়েছে, নকলনবিশ সাইফুল ইসলাম ৫৮৬৮ নম্বর দলিলের পাতা ভলিউম থেকে ছিড়ে নিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে কেশবপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিল সম্পাদন হয়। জমির মালিক নকল তুলতে গিয়ে জানতে পারেন ভলিউমে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র নেই । যশোর সদর উপজেলা সাবরেজিষ্টি অফিসের ১৯৭৬ সালের দলিল নম্বর ১৬২৮৬।
ভলিউম নম্বর ২০৩। পাতা নম্বর ১১৫, ১১৬ ও ১১৭। এই জমির মালিক মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালি গ্রামের নুরুল হুদা মিয়ার ছেলে দুলু মিয়া। ভলিউম থেকে ১১৫, ১১৬ ও ১১৭ নম্বর পাতা গায়েব হয়ে গেছে। কেবল গায়েবই হয়নি, তার জায়গায় সেঁটে দেয়া হয়েছে ঢাকার একব্যক্তির জমির কাগজপত্র। দুলু মিয়া এক বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলিলের নকল তোলার জন্য। কিন্তু পারছেন না। এমনকি ভলিউম দেখতে চাইলেও তা দেখানো হচ্ছে না। জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না দুলু মিয়া । ১৯৮০ সালে রেজিস্ট্রি হয় ৫৮৫ নম্বর দলিল। যার ভলিউম নম্বর ৪। পাতা নম্বর ২২৭, ২২৮, ২২৯ ও ২৩০। এই ভলিউম থেকে উল্লিখিত চারটি পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। রেকর্ড রুম থেকে বলা হচ্ছে চার নম্বর ভলিউম বইটি দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। ভলিউমের পাতা ছেঁড়া এই চক্রের বিরুদ্ধে আগে একবার তদন্ত হয়েছে। সেখানে তাদের এই অপকর্ম প্রমাণিত হয়। কিন্তু তাতে কী! অর্থের জোরে পার পেয়ে গেছে। এই চক্রের হোতাদের বক্তব্য, ‘টাকা থাকলে সবকিছুই ম্যানেজ করা সম্ভব।’ বাস্তবে হচ্ছে তাই। সূত্র বলছে, রেকর্ড রুম অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা। এখানকার সবকিছুর দায়ভার রেকর্ডকিপারের। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তার সম্মতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। অথচ রেকর্ডকিপার বর্তমানে সাইফুল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button