অর্থ ও বাণিজ্যআঞ্চলিক

রুপদিয়ায় কৃষি ফার্ম ঢাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সিরাজুলের ড্রাগন চাষে সফলতা


মালিক উজ জামান, যশোর : ব্যক্তি উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম যশোরের চাঁচড়া রুপদিয়ায় কৃষি ফার্মস গড়ে তুলেছেন। তার ৩২ বিঘা জমিতে বিদেশী ড্রাগন ফল বাগান দেখতে প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে মানুষ ভীড় করছেন।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে সিরাজুল ইসলাম উদ্যোগ নেন রাজধানী ঢাকায় নয়, নিজ জন্মভূমিকে কৃষি উৎপাদনে আলোকিত করবেন। যা ভাবা তাই কাজ। মাত্র পৌনে তিন বিঘা জমিতে তিনি ড্রাগন চাষ শুরু করেন। ২০২২ সালে এসে তার ড্রাগন বাগানটির আয়তন ৩২ বিঘা। এই ড্রাগন বাগানের মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ত্বীন ফল। এছাড়া আইল বরাবর অতি ফলন সমৃদ্ধ পেপে সকলের নজর কাড়ছে। রয়েছে কাগুজে লেবু। বেড়ার গায়ে রয়েছে চাল কুমড়া ও করোলা উচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলার ১০নং চাঁচড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রাম রুপদিয়। এখানে হিন্দু মুসলিম মিলে বছরের পর বছর পারিবারিক সামাজিক বন্ধনে একই আকাশের নীচে বসবাস করেন। তবে জনপ্রতিনিধিরা এখানে যেন কেমন। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে তাদের দেখা মেলেনা। রাস্তায় ঘ্যাষ ফেলাতে হবে সেখানে এই সিরাজুল ইসলাম না হলে চলবে না। কবরস্থানে জমি ক্রয়, মাদ্রাসা মসজিদ নির্মান, গরিব মানুষের বিপদে আপদে সেই শেষ ভরসাস্থল। গাছে ড্রাগন ফল হয়েছে, কি পেপে পেকেছে, কাগুজে লেবু হয়েছে এসব গ্রামবাসী অবলিলায় বরাদ্দ পায়। ফলে ২০২২ সালের আগে তিনি ড্রাগন ফল বিক্রি করেননি। পুলেরহাট টু রাজগঞ্জ সড়কের কেশবের মোড় থেকে রুপদিয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ১০০ গাড়ি ঘ্যাষ দিয়েছেন নিজের পকেটের টাকা ব্যয় করে। তবে মানুষের কাজে লাগছে বলে তিনি কষ্টবোধ না করে আনন্দিত হন। তার জমিতে উৎপাদিত ড্রাগন, লেবু, পেপে গ্রামবাসী নিজের মনে করে বরাদ্দ পায়। এসব দেখে যেন সৃষ্টিকর্তা তার কৃষি ফার্ম কে অধিক ফলনের এক দৃষ্টান্ত স্থাপনে সহায়তা করেছেন। লেবু গাছে লেবুর ছড়াছড়ি। পেঁপে গাছ পেপের আধিক্যে একাকার। ড্রাগন ফল হয়েছে আশানুরুপ। গ্রামবাসি সকলেই তার চাষাবাদে আশান্বিত। তারা প্রায় তা খেতে পায়। অতি দামি ড্রাগন ফল, কিন্ত তা জনতায় বিনামূল্যে বিলিয়ে সুখী হন উদার সিরাজুল ইসলাম। তার সেই মানবিক সুখ টাকায় কেনা অসম্ভব।
উম্বর আলী মোড়লের পুত্র আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম। নিজ জমিতে ড্রাগন গাছে আদর দিতে দিতে জানালেন, ড্রাগন এমন একটি ফল যা চাষ করে কৃষক স্বাবলম্বী হতে পারে। তিনি এখনো পর্যন্ত শুধুই খরচ করেছেন। তার প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন ব্যাপক উৎপাদন ও বিক্রি করে আয়ের পালা। ১১ বিঘা জমিতে মাচা স্থাপন করা হয়েছে। কেননা মাচায় ড্রাগন ফলন বেশি হয়। এছাড়া ২১ বিঘা জমিতে টায়ার স্থাপন করা হয়েছে। এখানে এখন ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে। ইতিমধ্যে কৃষি কর্মকর্তা জাকির ও সাখাওয়াত সাহেব সিরাজুল ইসলামের ড্রাগন ফার্ম পরিদর্শন করে উচ্ছ্বসিত। কেননা এখানে জৈব পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। জৈব পদ্ধতির চাষাবাদই কৃষকের মূল শক্তি। সারা বিশ্বে তা গৃহিত এক্িট স্বীকৃত কৃষি চাষাবাদ পন্থা। আগামী এক বছরে ড্রাগন কৃষি ফার্ম টি অন্তত ৪০/৪৫ বিঘা আকার বা আয়তন হবে। এটি নি:সন্দেহে এই অঞ্চলের সব থেকে বড় ড্রাগন চাষের ব্যক্তিগত উদ্যোগ। তার গাছে ত্বীন উৎপাদন হয়েছে দেখার মত। আরো জানান, তিনি কৃষি পরিবারের সন্তান। কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা আছে। এ কারনে রাজধানী ঢাকায় গার্মেন্টস ব্যবসার ব্যস্ততার মাঝেও মাটির টানে তিনি গ্রামে বার বার ফিরে আসেন। যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে তিনি সবুজ কৃষি গাছপালা ও বাংলার মেঠো পল্লী রুপদিয়ায় তার কৃষি ফার্মটিকে তিনি সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য কৃষিজ উৎপাদনের একটি বিশ্ব মডেল হিসাবে গড়তে চান। সে লক্ষ্যেই তিনি সবুজ আন্দোলনে নিজেকে আরো দক্ষ করছেন। আর কৃষি অক্সিজেন সমৃদ্ধ সবুজ পরিবেশে বসবাস করতে ফার্মের মাঝখানে একটি পাকা বাড়ি নির্মান করছেন। যে বাড়িটির চারিপাশে থাকবে ফলজ উৎপাদন ও কৃষিজ নির্ভারতার প্রতীক বিভিন্ন চাষাবাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button