প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেন ইউএনও’র ড্রাইভারের স্ত্রী ও এসিল্যান্ডের কাজের মেয়ে পেলেন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অসহায় ও গরিবের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন ইউএনও শাহাদাত হোসেনের ড্রাইভার বেলাল হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল আলমের বাসার কাজের মেয়ে পারভীন আক্তার।
সচ্ছল ব্যক্তিরা এই ঘর পাওয়া নিয়ে চলছে সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, সঠিক তথ্য গোপন করে এই ঘর পেয়েছেন তারা। এতে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও এসিল্যান্ড। উপজেলার পৌর এলাকায় মাত্র ৬ টি ঘর বরাদ্দ দিতে গিয়ে এই কান্ড ঘটালেন ইউএনও-এসিল্যান্ড। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নানা সমালোচনা।
তথ্য পাওয়া যায়, গত ২১ জুলাই সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬ হাজার ২২৯ টি ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই তালিকায় সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভার মহাদেবপুর এলাকায় জমিসহ ৬ টি সেমিপাকা ঘর ৬টি পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এই ৬ টি ঘরের মধ্যে একটি ইউএনও মোঃ শাহাদাত হোসেন এর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক বেলাল হোসেন সম্রাটের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার, একটি এসিল্যান্ড মোঃ আশরাফুল আলম এর গৃহকর্মী পারভিন আক্তার ও একটি নন্দ রাণী দাসকে দেয়া হয়।
অপর ৩ টি ঘর দেয়া হয় রোসন আরা বেগম, হাসিনা আক্তার ও নাছিমা বেগমকে। শেষোক্ত তিনজন হলেন সে সকল ব্যক্তি যারা আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের আগে থেকেই ওই জমিতে বসবাস করে আসছিলেন। সরকারের এই খাস জমিটি তারা তিনজন দখলদারের কাছ থেকে দখলস্বত্বে মোটা অঙ্কের টাকায় ক্রয় করেছিলেন বলে জানান।
এদিকে ইউএনও’র গাড়ি চালক বেলাল হোসেন সম্রাটের স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এলাকায় নানা সমালোচনার জন্ম দেয়। কারণ একদিকে বেলালের যেমন পৈতৃক বাড়ি রয়েছে তেমনি তার স্ত্রী তাসলিমারও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া রয়েছে অঢেল সম্পত্তি।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুরের প্রসিদ্ধ চালাদার বাড়ির মৃত আবুল মুনছুরের কন্যা তাসলিমা আক্তারের বাঁশবাড়িয়া এলাকার বোয়ালিয়া মৌজায় নিজ নামে সৃজিত খতিয়ানও রয়েছে। তার এক ভাই বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য৷
এছাড়াও ইউএনও তার অস্থায়ী গাড়ি চালক বেলালকে স্ত্রী-পরিজনসহ বসবাসের স্থান করে দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভিতরে অবস্থিত সরকারি কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দকৃত বাসায়। এ নিয়েও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। অথচ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বেলালের সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরের দোয়াজি পাড়া এলাকায় নিজস্ব জমিতে রয়েছে সেমিপাকা প্রশস্ত পৈতৃক বাড়ি, আছে দোকান, গাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া সীতাকুণ্ডের এসিল্যান্ড মোঃ আশরাফুল আলমের গৃহপরিচারিকা পারভীন আক্তারের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নে রয়েছে পৈতৃক সম্পত্তি। তার স্বামী মোঃ মান্নান মিয়া ব্যক্তিগত জীবনে একজন মাদক সেবী ও মাদকচাষী।
নিজ গৃহের সামনেই গাজার গাছ লাগিয়ে পরে গাছসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন তিনি। বড় কর্তার গৃহপরিচারিকা হওয়ার সুবাধে সেই বেলালের একই কায়দায় উপজেলার সামনে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে স্বামীকে দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন পারভীন আক্তার।
বেলাল স্ত্রীর নামে ঘর পেয়েছেন, আর পারভীন আক্তার পেয়েছেন স্বামীর নামে দোকান। মান্নান স্টোর নামে চলছে ওই দোকানটি। অবাক করা বিষয় সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা শুভ হোটেল ও মান্নান স্টোর নামের দোকান দুটির অবস্থানও পাশাপাশি। এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের ঘর দুটিও সর্বাধিক সুবিধাজনক অবস্থানে।
সীতাকুণ্ডের মহাদেবপুর ইকোপার্ক সড়কে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ইউএনও’র গাড়ি চালক বেলালের স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরটি তালাবদ্ধ। জানতে চাইলে তাসলিমা আক্তারের স্বামী ইউএনও’র গাড়ি চালক বেলাল হোসেন কাছে তার পৈতৃক বাড়ি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে বেলালের একাধিক প্রতিবেশী তার পৈতৃক বাড়ি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও সীতাকুণ্ড উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘কয়টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে ও কাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আমি এসবের কিছুই জানিনা। সেসব ইউএনও স্যার দেখেন।’
সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, ‘চেয়ারম্যানরা আমাদেরকে যাদের ভূমিহীন সনদ দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ঘর দেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের দেয়া ভূমিহীন সনদ দেখে আমরা গৃহহীন বাছাই করেছি। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন তারা ভূমির মালিক হলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বাতিল করা হবে।’
চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘ঘর বরাদ্দে গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব আমার নয়। ইউএনও-এসিল্যান্ডের কাছে। কোন ধরণের অনিয়ম-স্বজনপ্রীতির সঙ্গে আমি নেই।’