শুধু পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের ক্ষেত্রেই নয়, রাজ্যের বাইরে কিংবা বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান বা ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলো থেকে যেসব পর্যটকরা কলকাতা শহরে বেড়াতে আসেন তাদের কারো ইচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, আবার কারো ইচ্ছে আলিপুর চিড়িয়াখানা, কেউ আবার ভারতীয় জাদুঘর, সায়েন্সসিটি বা নিকো পার্ক ঘুরতে যান। কিন্তু সেক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অ্যান্ট্রি পাস।
কলকাতা শহরের এসব স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য আলাদা আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার ঝামেলা কেউই পোহাতে চান না, সেই ধৈর্য অনেকের থাকে না। শুধু তাই নয়, একেকটি দর্শনীয় স্থানে টিকিটের মূল্য একেক রকম। এবার সেই সব ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি। চলতি শীতের মৌসুমে এক টিকিটেই ঘুরে নিতে পারবেন কলকাতা শহরের একাধিক স্থান। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে কিউআর কোড দেওয়া ‘ইন্টিগ্রেটেড সিটি পাস’।
মাত্র ৪৯৫ টাকায় ২১টি দর্শনীয় স্থান মানুষ উপভোগ করতে পারবেন। এই পাসের জন্য কোনো স্থানের টিকিট কাউন্টারে লাইন দিতে হবে না। পুরো ব্যাপারটিই সম্পন্ন হবে অনলাইনের মাধ্যমে। অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমেই ইন্টিগ্রেটেড টুরিস্ট পাস কেটে নেওয়া যাবে। আর একটি সিটি পাস কাটলেই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো খুব সহজেই ঘুরে নেয়া যাবে। যদি কোনো পর্যটক ওই ২১টির বদলে তার পছন্দ মতো আরো কম দর্শনীয় স্থানগুলোতে পরিদর্শন করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে ওই পর্যটককে কেবলমাত্র ওই নির্দিষ্ট স্থানের প্রবেশের ভাড়াই গুনতে হবে।
মূলত কলকাতার মতো ব্যস্ত শহরে পর্যটন শিল্পকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা যাতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই শহর ঘুরে দেখতে পারেন সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।
বুধবার রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এই টুরিস্ট পাস নিয়ে বিস্তারিত জানান। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের টুরিস্ট পাসের বিজ্ঞাপনে গান গেয়েছেন গায়ক ও মন্ত্রী।
তিনি জানান, ৭ দিনের জন্য বৈধতা থাকবে এই পাসের। যারা শহরের বাইরে থেকে আসছেন, তাদের কাছে এই শহরটাকে চেনার আরো সুন্দর সুযোগ করে দিল রাজ্য সরকার। ২১টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চারটি স্থান থাকবে সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্য। প্রত্যেকটি পাসে একজন করে বৈধ। এই অ্যান্ট্রি পাস দিয়ে একটি জায়গায় সর্বোচ্চ পাঁচবার প্রবেশ করা যাবে।
২১টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে থাকছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর, নেহেরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম, বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম, নিকো পার্ক, মাদারস ওয়ার্কস মিউজিয়াম, সায়েন্স সিটি, ইকোপার্ক, এয়ারক্রাফট মিউজিয়াম, গান্ধী আশ্রম, কলকাতা পোর্ট মেরিটাইম হেরিটেজ সেন্টার, রবীন্দ্র তীর্থ, নজরুল তীর্থ, আলিপুর জেল মিউজিয়াম, দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি, স্মরণিকা ট্রাম মিউজিয়াম, নেতাজি ভবন, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বিবেকানন্দ হাউস অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার, নাট্য শোধ সংস্থান, কলকাতা পুলিশ মিউজিয়াম ও রাজ্য আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম প্রমুখ।
বাবুল সুপ্রিয় আরো বলেন, রাজ্যের বাইরে কিংবা দেশের বাইরে থেকে কোনো পর্যটক যদি কলকাতা শহরে আসেন, তাদের যাতে আমরা সুবিধা দিতে পারি, অগ্রাধিকার দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এতদিন পর্যটকরা যে স্থান পরিদর্শনে যেতেন, সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হতো। কিন্তু এবার ৪৯৫ রুপি দিয়ে কিউআর কোড দেওয়া ইন্টিগ্রেটেড সিটি পাস কিনে নিলে ওই ২১টি স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন। আর যদি কোনো পর্যটক তিনটে কিংবা চারটে স্থান পরিদর্শন করতে চায়, সেক্ষেত্রে যদি তার ভাড়া ১৯৫ রুপি হয়, তবে ওই নির্দিষ্ট ভাড়াই গুনতে হবে।