অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

যশোরে রঙিন ফুলকপি চাষে সাকিন সফল

যশোর চুড়ামনকাটি বেশ ফুলকপি চাষ হয়। কিন্তু রঙিন ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না কোনো কৃষক। তাদের আশঙ্কা ছিলো, মানুষ এগুলো খাবে না, চাষ করে লোকসান হবে। কিন্তু সাহস দেখালেন কৃষক সাকিন হোসেন। গত বছর প্রথমবারের মতো ব্যতিক্রমী এ ফসলের চাষে হাত দেন তিনি। প্রথমবারেই সফল। এবার তাই আগেরবারের চেয়ে বেশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেন। যথারীতি এবারও লাভবান। সাকিন হোসেনের সফলতায় এ প্রজাতির ফুলকপির চাষে এখন আগ্রহী অন্য অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী জানান, চলতি বছরে যশোর সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ২৮০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন ও হৈবতপুর ইউনিয়ন এলাকার ২ হেক্টর জমিতে রঙিন ফুলকপির আবাদ করা হয়েছে। ‘ভ্যালেন্টিনা পিংক ও ক্যারোটিনা ইয়েলো জাত দুটি ভারতীয়। যশোর সদরে দুই হেক্টর জমিতে এই জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই কপিতে প্রচুর ক্যারোটিন ও আয়রন আছে। এ ছাড়া এই সবজির দাম বেশি হওয়ায় অল্প জমিতে চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবানও হতে পারেন সহজে।

চুড়ামনকাটি মাঠে গিয়ে দেখা যায় সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে আছে কয়েকশ’ রঙিন ফুলকপি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যালেন্টিনা পিংক অর্থাৎ গোলাপি রঙের কপি। পাশাপাশি দেখা গেল ছোট আকারের অর্ধশতাধিক ক্যারোটিনা ইয়েলো অর্থাৎ হলুদ কপি। পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে এই ফুলকপি, যা দেখতে ভীড় করছে উৎসুক জনতা ও এলাকাবাসী।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ফুলকপি সাধারণত সাদা রঙের। তবে এখানে চাষ হচ্ছে হলুদ ও পিংক ফুলকপিও। ফুলকপি তার রং পায় ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ থেকে। অ্যান্থোসায়ানিন রক্ত জমাট বাঁধা কমিয়ে হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। হলুদ ফুলকপির রঙের পেছনে ‘ক্যারোটিনয়েড’-এর ভূমিকা রয়েছে। এতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক সাকিন হোসেন জানান, ইউটিউব দেখে গত বছর তিনি ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে ফুলকপির দুটি জাত নিয়ে এসে ফুলকপির চাষ শুরু করেন। একটি নাম হল ভ্যালেন্টিনা পেইন্ট, অপরটির নাম হল ক্যারোটিনা ইয়েলো। প্রথমবারের মতো নিজের জমিতে অল্প ফুলকপির চারা রোপণ করেছিলেন। এতে প্রথম বছরেই মেলে সফলতা। প্রথমবারের মতো উৎপাদিত রঙিন ফুলকপি বিক্রি করে খরচের দ্বিগুণের অধিক টাকা লাভবান হচ্ছেন তিনি। তাই এবার তিনি ৩ হাজার রঙিন ফুলকপির চারা রোপণ করেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ফুলকপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করেছেন। বাজারে রঙিন ফুলকপির চাহিদাও আছে বেশ।

গত বছরের মাঝামাঝিতে ভারত থেকে ভ্যালেন্টিনা পিংক ও ক্যারোটিনা ইয়েলো জাতের ফুলকপির বীজ এনেছেন বলে জানালেন সাকিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্যাকেটে ৫০০ পিস বীজ থাকে, প্রতিটি প্যাকেটের দাম পড়েছে এক হাজার ১০০ টাকা। তিন হাজার বীজ এনেছিলাম। দুই হাজার ভ্যালেন্টিনা ও এক হাজার ক্যারোটিনা বীজ রেখে চারা উৎপাদন করেছি

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরুন বিশ্বাস জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে রোগবালাই কম হয়। জৈব উপায়ে এই ফুলকপিতে আসা পোকামাকড় দমন করা যায়। ফলে কৃষককে বাড়তি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।

রঙিন ফুলকপি এবং সাদা ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য শুধু বীজে। চাষের পদ্ধতির অন্য সব প্রক্রিয়া একই। কিন্তু বাজারে দাম সাদা ফুলকপির তুলনায় প্রতিটিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button