শীর্ষ নিউজ

২২ বছর পার তবু শামসুর রহমান হত্যা মামলার বিচার হয়নি


মালিক উজ জামান, যশোর : দীর্ঘ ২২ বছরেও যশোরের প্রথিতযথা সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যার বিচার হয়নি। থমকে আছে বিচার প্রক্রিয়া। এমতাবস্থায় যশোরের সাংবাদিক মহল সাংবাদিক শামসুর রহহমানের খুন মামলার সঠিক বিচার দাবি করে ১৬ জুলাই শহরের কারবালায় মরহুমের কবরে পুস্প অর্পণ করেন। পরে প্রেসক্লাব যশোরে একটি স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
এদিন সকালে মরহুম সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলের কবর জিয়ারত ও কবরে ফুলেল শ্রদ্ধাঝ অর্পণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসক্লাব যশোেেরর সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা সংবাদ পত্র পরিষদের সভাপতি দৈনিক কল্যাণ সম্পাদাক একারাম উদ দৌলা, সাবেক সহ সভাপতি এ্যাড. বোরহান উদ্দীন জাকির, সম্পদাক তৌহিদুর রহামান, সহ সভাপতি ওহাবুজ্জামান ঝন্টু ও নুর ইসলাম, মিলন রহমান, শহীদ জয়, দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি ফারাজী শাহাদৎ বুলবুল, তহীদ মনি, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জেলা ফটো সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। পরে প্রেসক্লাবে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন, আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুক্তার আলী। সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল ১৯৫৭ সালে ৫মে শার্শা শালকোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সোহরাব উদ্দিন, মাতা খাইরুন্নেছা বেগম। তিনি ১৯৭২ এস. এস. ডস, ১৯৭৪ সালে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনাস ১৯৭৮ খ্রীঃ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। কর্মজীবনে তিনি দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় কাজ করেছেন। তাঁর বিভিন্ন উপ-সম্পাদকীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ক লেখা দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮০-১৯৮১ সালে দৈনিক ঠিকানার (যশোর) স্ট্যাফ রিপোর্টার, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে দৈনিক বাংলার নওয়াপাড়া নিজস্ব সাংবাদিকতা, ১৯৮৪-১৯৮৬ সালে তিনি দৈনিক বাংলার যশোর এর নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৯৮৬ (নভেম্বর) ১৯৯৩ সালে দৈনিক বাংলার স্ট্যাফ রিপোর্টার ও সিনিয়ার রিপোর্টার, ১৯৯৩ (নভেম্বর) দৈনিক বাংলার জেলা ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং সাল থেকে তিনি জনকন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলায় নিয়মিত রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি, ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত রিপোর্ট ও বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখতেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আন্তর্জাতিক বিভাগে ভারতীয় রাজনীতির উপর তাঁর প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তি পত্রিকায় বিভিন্ন বিভাগেও তিনি নিয়মিত লিখতেন।
প্রতিদিনের মতই অফিসে আসেন শামছুর রহমান। টেলিফোনে কথা বলেন বড় মেয়ে সেজুতি রহমানের সাথে। খবর নেন টিভির রিমোট ঠিকমত কাজ করছে কিনা। কথা বলার চেষ্টা করেন ২বছর বয়সী ছ্টো মেয়ের সাথে। স্ত্রীকে ‘শরীর ভাল লাগছে না, খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো ’বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এটি ছিল তাঁর ঘোপের বাসায় করা সর্বশেষ টেলিফোন। এরপর তিনি রিপোর্ট লিখেছেন। টেলিফোনে কথা বলেন সহকর্মী কয়েক সাংবাদিকের সাথে। প্রত্যেককে বলেন, আপনার সাথে কথা আছে পরে আবার ফোন করবো। রাত সোয়া ৮টার পর তিনি অফিসের কর্মচারী জাকিরকে বাসায় পাঠান পারিবারিক কাজে। ছোট ভাই সাজেদুর রহমান বকুলকে পাঠান পত্রিকা এজেন্সির মেসার্স এজাহার আলীর কাছ থেকে গত জুন মাসের পত্রিকার রশিদ আনতে। বকুল চলে যাওয়ার পর শামছুর রহমান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বরাবর একটি চিটি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি ঐ চিঠিটি শেষ করতে পারেননি। চিঠির ওপরে বিষয় জুন ২০০০ মাসের অসমাপ্ত এই বাক্যটি লেখা। সম্ভবত এ সময়ে ঘাতকরা শামছুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে গুলি করে। রশিদ আনতে যাওয়ার মিনিট তিনেক পর বকুল দেখতে পান মর্মান্তিক দৃশ্য। তার বড় ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহটি পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে ঘরের মেঝে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ বকুলের আর্ত চিৎকারে এগিয়ে আসেন অন্যান্যরা। তারা ধরাধরি তরে নিয়ে যান অফিসের সম্মুখস্থ যশোর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা বিফল হয়ে যায়। পেশাদার খুনির বুলেট আগেই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল কলম সৈনিকের রক্তে রক্তাক্ত হল। হতভাগ্য সাংবাদিক শামসুর রহমান সাংবাদিক জগতে চলমান কম্পিউটার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁর মেধার পরিচয়ে মফস্বলের জেলা শহরে থেকেও সাংবাদিকতায় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। অন্যায়, অনাচার, দূর্নীতি ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল সর্বদা সোচ্চার। পুলিশ, বিডিআর থেকে শুরু করে সব ধরণের সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তৎপর চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী চক্রগুলোর বর্তমান ও অতীত কর্মকান্ড লিখে এবং তাদের সমর্থনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লেখা তার বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্ট পুলিশের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিত। ঠিক তেমনি চোরাচালান দমনের নামে সীমান্ত এলাকায় বি. ডি. আর যে লুটপাট চালাতো তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর কারণে বি. ডি. আর তা সহ্য করতে পারতো না। এ সমস্ত কারণে ক্ষমতাসীন দলের এ অঞ্চলের অনেক নেতারাও তাঁর ওপর রুষ্ট ছিলো। কিন্তু শামছুর রহমান তাতে দমেননি। হাজারো ভয়ভীতি ও জীবননাশের পরও তিনি কলম চালিয়ে গেছেন সমানতালে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button