আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

যশোর পঙ্গু হাসপাতালে মফিজুর হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতি নেই


মালিক উজ জামান, যশোর : প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও যশোরের আলোচিত ডা. আব্দুর রউফের পঙ্গু হাসপাতালে ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান হত্যা মামলার এখনো কোন কুলকিনারা হয়নি। লিফট কোম্পানিকে চিঠি দেয়া ও লাশ উদ্ধারের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজনের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ছাড়া তদন্তের তেমন অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকা-ের ৮ মাসে তদন্তের এই চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
মফিজুর রহমান হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সালাহ উদ্দিন খান বলেন, স্যারের সাথে মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলবো বলে এড়িয়ে যান। নিহত মফিজুর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। গত ২ এপ্রিল শহরের মুজিব সড়কে ডা. আব্দুর রউফের পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নীচ থেকে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তার মাকে ভর্তি করেছিলেন। ৩১ মার্চ দুপুরে নিচে আসেন বিলের টাকা দিতে। ওই সময় ডাক্তার আব্দুর রউফের সাথে মফিজুর রহমানের বাকবিত-া হয়। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। বন্ধ ছিলো তার মুঠোফোন। ওই দিনই তার ছেলে সোয়েব উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। কোতোয়ালি থানা, ডিবি, পিবিআই ও সিআইডি পুলিশ মফিজুর রহমানের সন্ধ্যানে মাঠে নামে।
এপ্রিল হাসপাতালের লিফটের নীচ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ লিফটের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে মফিজুরের লাশ উদ্ধার করে। তখন হাসপাতালের ম্যানেজার আতাউর রহমান, লিফটম্যান জাহিদ গাজী ও আব্দুর রহমানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবশ্য পরের দিন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। মফিজুর হত্যাকা-ের ঘটনায় ছেলে সোয়েব উদ্দিন ৩ এপ্রিল অজ্ঞাত আসামি করে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। সোয়েব বলেন, তার পিতার হত্যাকা-কে পুঁজি করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে মোটা অংকের টাকা লেনদেনে হয়েছে। আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ায় সেই সন্দেহ আরো তীব্র হয়।
যে কারণে তার মা (মফিজুরের স্ত্রী রোমানা বেগম) ২৮ জুন ডা. রউফসহ আসামিদের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন। কিন্তু মামলা তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। আটক করা হয়নি কোন আসামিকে। এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি থানার এসআই কাজী আবু জুবায়ের। পরে জুবায়েরকে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে সরিয়ে গত ১৮ জুন নতুন ভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই সালাহ উদ্দিন খানকে। লাশ উদ্ধারের দিন হাসপাতালে যে সব দর্শনার্থী ও রোগীর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। তবে তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পঙ্গু হাসপাতালের লিফটে কোন ত্রুটি আছে কিনা তা জানার জন্য গ্লোবাল লিফট কোম্পানিকে ১৭ এপ্রিল চিঠি দেয়া হয়। চিঠি দেয়ার পর প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কোন রিপোর্ট দেয়নি লিফট কোম্পানি। নিহত মফিজুরের স্বজনরা অভিযোগ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে মামলার তদন্তে কালক্ষেপন করছেন। লিফট কোম্পানির রিপোর্ট না পাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন।
এদিকে এ হত্যাকা-টি লিফট দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও সুরাতহাল রিপোর্ট তাদের পক্ষে নিতে বিভিন্ন মহলে তদবির করে চলেছেন। যদিও সুরাতহাল রিপোর্টে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ময়না তদন্ত সম্পন্নকারী যশোর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. বাবলু কিশোর বিশ্বাস রক্তক্ষরণের কারণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন মাথা, বুক, পেট ও হাতে ও পায়ে জোরালো আঘাতে রক্তক্ষরণ হয়।
এর ফলে রক্ত শূন্যতায় মফিজুর রহমান মারা যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কোথাও বলা হয়নি পঙ্গু হাসপাতালের লিফট থেকে পড়ে আঘাতের কারণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণে মফিজুরের মৃত্যু হয়েছে। তবে কিভাবে আঘাত পেয়েছে এটা আমি বলতে পারবো না। এটি বলবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে ডা. রউফের নির্দেশে মফিজুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে বারবার দাবি করে আসছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার বিল মেটানোর সময় বাকবিত-ার জের ধরে পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডা. আব্দুর রউফের নির্দেশে রায়পাড়ার একদল সন্ত্রাসী মফিজুর রহমানকে হাসপাতালের গেট থেকে অপহরণ করে।
রায়পাড়ায় নিয়ে সেখানকার এক আইনজীবীর দ্বিতীয়তলার বাড়িতে আটকে রেখে মফিজুরকে হত্যার পর লাশটি রাতেই পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে রাখে। নিহত মফিজুরের ভাগ্নে সাইফুদ্দিন ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ম্যানেজার আতিয়ার রহমানের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান। কিন্তু সিসি ক্যামেরা ‘ত্রুটি ছিলো’ বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। হত্যাকা-ের তথ্য আড়াল করতে এমনটি করা হতে পারে বলে স্বজনরা মনে করছেন।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সালাহ উদ্দিন খান মন্তব্য করেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button