রাজনীতিশীর্ষ নিউজ

যশোর জেলা যুবলীগ কমিটি নিয়ে এখনো ধুয়াশা


মালিক উজ জামান, যশোর : কে হচ্ছেন যশোর জেলা যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদক! চলছে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ কেন্দ্রে। গোপালগঞ্জ, খুলনা ও বাগেরহাটেও লবি চলছে পদ প্রত্যাশীদের।
যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা হচ্ছেন, ১) যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, ২) সৈয়দ মুনির হোসেন টগর, ৩) মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন মিঠু ৪) শফিকুল ইসলাম জুয়েল ৫) সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জেলা ছাতলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ৬) জাকির হোসেন ৭) সৈয়দ মেহেদী হাসান ৮) আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ৯) রওশন ইকবাল শাহী ১০) মাজহারুল ইসলাম ১২) আলমগীর কবীর সুমন ১৩) দেবাশীষ রায় ১৪) শেখ জাহিদুর রহমান লাবু ১৫) হাফিজুর রহমান। প্রচার রয়েছে ১০ আগষ্টের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি পদ কেন্দ্র থেকে ঘোষনা করা হবে। সেই প্রক্রিয়া কতটুকু তা অবশ্য জানা সম্ভব হয়নি।
যশোর জেলা যুবলীগের শীর্ষ পদ পাওয়ার জন্য প্রায় ২০/২২ জন নেতা-কর্মী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পদ প্রত্যাশীরা প্রায় সবাই রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন। সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে আলোচনায় আছেন প্রায় এক ডজ্জন নেতার নাম। এরা ইতিমধ্যে পদ প্রত্যাশায় নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তারপরেও কেটে গেছে ঝিনুক লম্বা একটি সময়। এখনো পরিস্থিতি গোলমেলে। আর তাই এখন জনমনে প্রশ্ন কে হচ্ছেন যশোর জেলা যুবলীগের সভাপতি সম্পাদক।
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর যশোর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোস্তাাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩ থেকে ৬ জানুয়ারির মধ্যে যুবলীগের প্রধান কার্যলয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপিসহ জীবন বৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে গত ১ ডিসেম্বর বর্ধিত সভায় ঘোষণা করা হয়। ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিলের পর মে মাস শেষ হওয়ার পথে।
খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল জানিয়েছেন, তৃনমূলের ইউনিটগুলোর দাবির ভিত্তিতে বর্ধিত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্ত ২৩ জানুয়ারি সম্মেলন হয়নি। বরং বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করবেন। এদিকে শিক্ষা যদি নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখে তবে এগিয়ে রয়েছেন যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। তিনি মাস্টার্স ও এলএলবি সম্পন্ন করেছেন। এগিয়ে রয়েছেন মঈন উদ্দীন মিঠু।
দীর্ঘদিন পর নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন যশোর জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টসর, যশোর পৌর সভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদের সাথে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে কাগজে কলমে রয়েছেন। এছাড়া, যশোর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন মিঠু, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, যশোর জেলা আওয়ামী যুব লীগের নির্বাহী সদস্য শেখ জাহিদুর রহমান লাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায়, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. জাকির হোসেন, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাজহারুল ইসলাম, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আলহাজ্ব আলমগীর কবীর সুমন @ হাজী সুমন প্রমূখ। তবে কেন্দ্র থেকে শিক্ষা ও রাজনৈতিক পারফর্ম্যান্স বিবেচনা করা হবে এমন ঘোষনায় কোন কোন পদ প্রত্যাশী সঙ্গত কারনে একটু পিছিয়ে পড়েছেন। এসবই দলের গ্রুপিং লবিং থেকো প্রাপ্ত খবর। নইলে কেন্দ্র এ বিষয়ে একদম নিশ্চুপ। তারা যশোর জেলা যুবলীগ কমিটির শীর্ষ পদের বিষয়ে যেন মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন।
২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে বর্তমান যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়। ৫৩ সদস্যের এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হয়। অর্থাৎ ১৬ বছর অতিক্রম তবু আর হয়নি কমিটি।
এ কমিটির সভাপতি যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী পদত্যাগ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদের সাথে যুবলীগের পদে যুক্ত রয়েছেন। একই অবস্থা উপজেলা যুবলীগের কমিটি গুলোতে। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ৪/৫ বছর পার হয়েছে সবগুলো উপজেলায়। ওই সময় বেশ কয়েকটি উপজেলায় যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অভিযোগ উঠে, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পকেট কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবুও বহাল তবিয়তে আছেন তারা। এসব কমিটির নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, বোমাবাজি, চাঁদাবাজি, ত্রাণের চাল চুরিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে জেলা যুবলীগ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় যুবলীগের রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয় জেলার নেতৃবৃন্দ। পরে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশনায় যুবলীগ কিছুটা গতি পায়। পদ প্রত্যাশার আশায় বর্তমানে যশোর জেলা যুবলীগ বেশ কয়েকটি ভাগে ভিন্ন ভিন্ন নেতৃত্বে জাতীয় ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড জাকজমকপূর্ণ পালন করছে। এতে আর যায় হোক না কেন গতি ফিরেছে যুবলীগে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচি ও স্বেচ্ছা প্রনোদিত কর্মসূচিও এখানে নিয়মিত পালন হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button