শীর্ষ নিউজসংগঠন সংবাদ

ক্লাইমেট ক্যাম্প: ‘তরুণদের চাপে রাখতে হবে রাজনীতিবিদদের

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেছেন, ‘আমাদের দেশের তরুণেরা জলবায়ু সুবিচার আদায়ে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে। তারা যেমনি উদ্বিগ্ন তেমনি সক্রিয়ও। জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬’এ আমি যেভাবে তরুণদের নেতৃত্ব দিতে দেখেছি তা আমাকে অনেক আশাবাদী করে তুলেছে। তারা যেহেতু সোচ্চার হয়ে বিশ্ব নেতাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করেছে তাতে আমরা জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হবোই’। তবে দেশের অভ্যন্তরে পরিবেশগত সুবিচার ও দুষণের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদ বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিদের চাপে রাখতে আহবান জানান তিনি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিন ব্যাপি ক্লাইমেট ক্যাম্পের দ্বিতীয় সিজন’র উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার (৫ জুন) দুপুর ৩টায় জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের এলডি হলে ক্লাইমেট ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ক্লাইমেট পার্লামেন্টের সহ-সভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এর গ্লোবাল কমিশন অব বায়োডাইভারসিটি ২০৩০-এর কমিশনার ড. আবুল কালাম আজাদ, ইউএসএইড বাংলাদেশের শিক্ষা পরিচালক মিস কুপার, ওয়াল্টনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তানভীর আঞ্জুম প্রমুখ।

আর্থ সোসাইটির উদ্যোগে এ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।  ক্লাইমেট ক্যাম্পের সহযোগী হিসেবে রয়েছে ‘বেটার বাংলাদেশ টুমরো (ওয়ালটনের একটি টেকসই উদ্যোগ)’ ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রয়েছে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ। এছাড়া ক্লাইমেট ক্যাম্প আয়োজনের অংশীজন হিসেবে সঙ্গে রয়েছে ইএমকে সেন্টার ঢাকা, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, এসবিকে টেক ভেনচার ও শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।

এ সময় তরুণদের উদ্যোগে অর্থায়ন ছাড়া শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি অর্থহীন উল্লেখ করে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন,  নীতি পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন সকল পর্যায়ে  তরুণদের নেতৃত্ব ও অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ক্লাইমেট পার্লামেন্ট এর বয়স প্রায় এক যুগ হয়ে এলো। আমরা প্রথমে কাজ শুরু করি রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে, আমাদের ফোকাসটা সেখানেই ছিল। আপনারা যারা ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন বা আমাদের রিনিউয়েবল এনার্জি  নিয়ে কাজ করেন, আপনারা  জানেন যে আমাদের রিনিয়েবল এনার্জি অথোরিটি আছে। এটি টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।’

‘এই স্রেডাকে ফরমেশন করার কাজে আমরা ক্লাইমেট পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে একটি শক্ত ভূমিকা রেখেছিলাম এবং পরবর্তী সময়ে আমরা বিভিন্নক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে এচিভমেন্ট, সেগুলো তুলে ধরে এই অগ্রগতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লাইমেট পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে একটি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি যে, আমরা রিজিওনাল গ্রিড থেকে প্রমোট করবো, যে ভারত, নেপাল, ভুটান এই যে আমাদের সাউথ এশিয়ান যে রিজিওনগুলা আছে এগুলোকে ওয়ান গ্রিডের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যেন আমরা রিনিওয়েবল এনার্জি গুলোকে কানেক্ট করতে পারি।’

এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, “এবার কপ ২৬ যখন শুরু হয় তার আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের ক্লাইমেট  পার্লামেন্ট’র  যে রিজিওনাল হেড ছিলেন, তারা সবাই মিলে একটি ইনিশিয়েটিভ শুরু করেন, ‘ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড’। যার কারণে আমরা এবার প্রায়োরিটি দিচ্ছি রিজিওনাল গ্রিডকে। বাংলাদেশে আমাদের যে ভূখণ্ড, যে ভূখণ্ড অনুযায়ী আমরা সৌরশক্তি বলি বা বায়ুচালিত বিদ্যুৎ, আমাদের রিসোর্সের যেরকম অভাব আছে, সেরকম কিন্তু আমরা হয়তো উৎপাদন করতে পারবো না।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে  বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এর গ্লোবাল কমিশন অব বায়োডাইভারসিটি ২০৩০-এর কমিশনার ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ২০৫০ সালে পরিবেশ-প্রকৃতি যেমন হওয়ার কথা, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ত্বরান্বিত হওয়ায় ২০৩০ সালেই আমরা সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো। আমরা কি এর জন্য প্রস্তুত? তাই আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের তরুণদের কথা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরা যদি দূষণের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে যারা দূষণের সাথে জড়িত তারাও পরিবেশ দূষণের আগে অন্তত একবার ভাববে।’

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের ফলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই আগামী প্রজন্মকে নিজেদের কথা বলতে হবে। আমরা যদি এই প্রজন্মকে সচেতন করতে পারি তাহলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রক্তিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে, পরিবেশন বান্ধব ইটের ব্যবহার বাড়ানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে সোলার এনার্জি আছে। আমরা চেষ্টা করছি সারাদেশে এটাকে ছড়িয়ে দিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কার্বণ নিঃসরণ বন্ধ করতে না পারলে ৪০ মিলিয়ন মানুষ এর ক্ষতির শিকার হবে। আর আর্থিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪৫ বিলিয়ন ডলার।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, কোথাও সুন্দর পরিবেশ না থাকলে শিক্ষা আর সচেতনতার কথা বলার সুযোগ সেখানে কম। আমরা যদি আমাদের সব কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবেশকে না রাখি, তাহলে একসময় আমরাই থাকবো না।

দ্য আর্থ এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া জানান, টেকসই পৃথিবী, ভবিষ্যতের জন্য যুবদের পৃথক পদক্ষেপ ও তাদের নিজস্ব আইডিয়া বা ধারণা দিতে উৎসাহিত করতে ক্লাইমেট ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে। তাদের এই ধারণা ও বিভিন্ন কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে বেছে নেওয়া হবে সেরা তিন বিজয়ীকে। তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ক্লাইমেট ক্যাম্প ফেলোশিপের অধীনে যেকোনো একজন ক্লাইমেটপ্রেনারের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে ১ লক্ষ টাকা। ক্লাইমেট ক্যাম্প চলবে ৭ জুন পর্যন্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button