আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

সতীঘাটায় প্রতিষ্ঠিত ৯ সন্তান তবু বৃদ্ধা মা এখন গোয়াল ঘরে-যশোর সদর ইউএনও সেই মাকে ঘরে তুলে দিলেন

মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর সদর উপজেলার ১১ নং রামনগর ইউপির সতিঘাটার খরিচাডাঙ্গা সাবেক মেম্বার সহ ৯ সন্তানের বৃদ্ধা মাকে সন্তানরা গোয়াল ঘরে রেখেছিল। পত্র পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশ হতেই যশোর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনুপ দাস নিজে সেই গোয়ালঘরে হাজির হয়ে বৃদ্ধা মাকে তার এক সন্তানের ঘরে তুলে দিয়ে এলেন। সোমবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধার খোজে সেই গোয়ালঘরে পরিদর্শনে যান ইউএনও। তার আসার খবর পেয়ে নিরীহ গ্রামবাসী সেখানে ভীড় করে। তারা ইউএনও’র বৃদ্ধা মাকে সন্তানের ঘরে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ কে সমর্থন করে ইউএনও কে প্রশংসায় ভাসায়।
ইউএনও সোমবার তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খরিচাডাঙ্গার বৃদ্ধা মায়ের গোয়ালঘরে আসেন। পর্যবেক্ষণ করেন। সমাধান করে সেই বৃদ্ধা মহিলার বড় পুত্র সাবেক ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মালেক গাজীর কাছে হস্তান্তর করেন। এবং তার ছেলে মালেক গাজী, তার মাতার সকল ভরন পোষনের দায়িত্ব গ্রহন করেন। এর আগে পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল ;
‘গোয়াল ঘরে গরুর সাথী দিব্যি আছে বটে বৃদ্ধা মা
কুলাঙ্গার সন্তান কটা ওরে তোরা মানুষকূল দেখে যা
মাতা পিতা তবে হচ্ছে কি গৃহপালিত পশু দৃশ্য উপমা
সন্তান ওরাা গায়ে সেঁটেছে ভন্ড সমাজ শিক্ষার তকমা’
এখন সতীঘাটা খরিচাডাঙ্গায় গোয়ালঘরে সেই অবহেলিত মা কুলাঙ্গার সন্তানদের দেখতে মানুষের বেশ ভীড়। যশোর সদর উপজেলার ১১নং রামনগর ইউপির সতীঘাটা খরিচাডাঙ্গা গ্রামের ঘটনা। প্রতিষ্ঠিত নয় সন্তান থাকতেও এক হতভাগা বৃদ্ধা মাকে গরুর গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে। এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে ওই বৃদ্ধার সাত পুত্রের বিরুদ্ধে। ঐ বৃদ্ধা মায়ের নাম খুরশীদা বেগম (৮৫)। প্রতি নিয়ত চোখের পানি ফেললেও সন্তান, পুত্রবধূ বা নাতি পুতনীদের মন গলেনি। এখন কান্না ও মৃত্যু ছাড়া আর কিই বা কামনা করতে পারেন এই অবহেলিত মা। এই হতভাগা বৃদ্ধার এক পুত্র মালেক গাজী সাবেক মেম্বর ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, সমাজ সংসার লোকচক্ষু কিছুই বিবেচনায় নেই খরিচাডাঙ্গা গ্রামের মৃত বারেক গাজীর সন্তানদের। তাই তারা বৃদ্ধা মা খুরশীদা বেগমকে বর্তমানে গরুর গোয়াল ঘরে রেখে দিয়েছেন। পুত্র রশীদ গাজী মূল অভিযুক্ত। রবিবার সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে রশীদ গাজীর বাড়ির গরুর গোয়াল ঘরে তার বৃদ্ধা মা খুরশীদা বেগমকে রাখার এ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে অযতœ-অবহেলায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন ওই অসহায় খুরশীদা বেগম। এলাকাবাসী আরো জানান, যার ৯ টি সন্তান রয়েছে। তার বড় পুত্র সাবেক মেম্বর মালেক গাজীসহ সব ছেলেরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তারা যদি তাদের বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে না রেখে গোয়াল ঘরে গরুর সাথে রাখে তাহলে, সমাজের অন্য মানুষেরা তাদের পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে কি ভাবে রাখবে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী অতি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এলাকাবাসী জানায়, সর্বশেষ পাঁচ শতক ভিটের জমি ছিল এই বৃদ্ধার। তিনি কিক্তু দিন পূর্বে জমিটি আব্দুর রশিদের নামে রেজি্িস্ট্র করে দেওয়ার পর থেকে তার কপালে দূর্ভোগ নেমেছে। জমি নিয়েই মাকে সোজাসুজি গোয়ালঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে কুলাঙ্গার পুত্র আব্দুর রশিদ। গ্রামবাসী তাকে কুলাঙ্গার বলছে। সত্যিকার অর্থে তা যথাযথ বা সঠিক তবে কম বলা হয়েছে বলছেন মানুষ।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মহিলা খুরশীদা বেগম মানুষজন দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার অনেক জমি ছিল কিন্তু এখন আর সেসব নেই। স্বামী বেঁচে নেই তাই সবাই অবহেলা করে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রশীদ গাজী জানান, আমরা ৭ ভাই ও ২ বোন কিন্তু আমাদের ২ ভাই মারা গেছে, তবে বড় ভাই সাবেক মেম্বর মালেক গাজী, শহিদুল গাজী, রবিউল গাজী ও মনু গাজীসহ এখন আমরা ৫ ভাই ও ২ বোন বেঁচে আছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই আমি ছাড়া আর কোন ভাই আমাদের এই বৃদ্ধা মা’র কোন খোঁজ-খবর নেয় না। তিনি আরও বলেন,আমার ঘরে কোন জায়গা নেই তাই মাকে আপাতত গোয়াল ঘরে রেখেছি। সেটা যথাযথ, মানবিক নাকি মানবাধিকার লঙ্গন নাকি ইতরী কর্ম সে বিষয়ে মুখ খোলেনি তার পুত্ররা। এই বৃদ্ধার সকল পুত্র আশে পাশে থাকলেও তারা মায়ের খোজ খবর একেবারেই নেয়না। তার এক কন্যা নাবো মনিরামপুর উপজেলার ভোজজ্ঞাতী অন্যটি কঞ্চি ঝিকরগাছায় বিবাহ দেওয়া রয়েছে। তাদের কোথাও যেমন পাওয়া যায়নি। তেমনি তাদের মতামত পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button