চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

১ কোটি ২৬ লাখ টাকার মাতব্বরঘাট, জোয়ারে ডুবে-ভাটায় ভাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা মাতব্বর ঘাটের পন্টুন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পল্টুনের অনেক স্থানে পাটাতনের প্লেট নেই। পা পিছলেই বিপদ। এতে নদীর চেয়ে ঘাটকুলের সিড়িই বেশি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবুও ১১ নম্বর মাতব্বরঘাট দিয়ে এপার-ওপার কর্ণফুলী নদী পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। শহরের দক্ষিণপাড় কর্ণফুলীর জুলধার এ ঘাট হয়ে শহরের পতেঙ্গা ও বিমানবন্দরে যাতায়াত করেন লোকজন। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে পার হলেও দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কেননা, যেকোনো সময়ে পল্টুন ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র বলছে , চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১১ নম্বর ঘাটটি এ বছর ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় জুলধার আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুরকে ইজারা দিলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যথা। ঘাটটির সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। এভাবে ঝূঁকিতে পার হচ্ছে লোকজন। যদিও ঘাটের ইজারা মেয়াদ রয়েছে আগামী এপ্রিল মাস অবধি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের পাশে নদী থেকেই কাঁচা মাটি তোলা হচ্ছে ইটভাটায়। ঘাটে থাকা পন্টুন বেশ জরাজীর্ণ। পল্টুনের সিড়ির বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতবিক্ষত ও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের সময় ডুবে যাচ্ছে পল্টুন, আবার ভাটায় পানি নেমে গেলে ভেসে ওঠে। তখন লোকজন ঘাট পারাপার করতে গেলে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ঝূঁকি নিয়ে ঘাট পার হচ্ছেন।

জানা যায়, কর্ণফুলীর ১১ নম্বর ঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। ভূমি থেকে ১০ ফুট উপরে বেশ সঙ্কীর্ণ জায়গায় সরু পল্টুন সিড়ি। পাশে নেই নিরাপত্তা রেলিং। এক সাথে দুজন লোক হাঁটারও সুযোগ নেই। নিচে মাটি ও প্রস্তর। তবুও ঝুঁকিতে ঘাট পারাপার হচ্ছেন। সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে আর নিচে নামতে একটু অসাবধান হলেই নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ যেন বিপদের বড় গর্ত। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী চাকরিজীবি মোহাম্মদ আসলাম জানান, ‘বর্তমানে মাতব্বরঘাটের পন্টুন জরাজীর্ণ ও চলাচলে প্রায় অনুপযোগী। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব ঘাটগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সচল রাখা। কারণ চসিক প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ইজারাও রাজস্ব আদায় করেন। কিন্তু ঘাট গুলোর দেখা শোনা করেন না। স্থানীয়দের দাবি ঘাটটি দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি যাত্রী ছাউনি তৈরি করে তাতে পাবলিক টয়লেট ও ইবাদতখানার ব্যবস্থা করা।’

দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী-চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী,পটিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিদেশযাত্রী, শহরমুখী মানুষসহ, মেরিন একাডেমি, কাফকো, ডিএপিএফসিএল, কোরিয়ান ইপিজেড ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৮ হাজার চাকরিজীবী প্রতিদিন নদী পার হয় এই ঘাট দিয়ে।

সেকান্দর ও রহিম নামে দুই যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ যাত্রী তুলে নদী পাড়ি দেন মাঝিরা। বর্তমানে তেলেল দাম বাড়ার অজুহাতে ১৫ টাকা করে আদায় করছেন। আগে যা ছিলো জনপ্রতি ৬-৭ টাকা। এটাও হয়রানি যাত্রীদের।’ তবে অতিরিক্ত যাত্রী আর নদীতে বড় বড় ঢেউয়ে নৌকা দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যেই আতঙ্ক বাড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সিড়ি।

যাত্রীদের অভিযোগ, ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। ঘাট পারাপারে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়া, দেওয়া হয় না লাইফ জ্যাকেট। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। নেই কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা, বিধি কিংবা নীতিমালা, নেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা, ঘাটের ইজারাদার ও বোট মালিক সমিতি থাকলেও কেউ মানছে না নিয়মনীতি। তারপরও সড়কপথে যানজট এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করে মানুষ। বিদেশযাত্রী, স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির প্রয়োজনে আশপাশের মানুষের ভরসা ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘এলাকার সাধারণ জনগণ ও ঘাট পারাপার হওয়া যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু ঘাট সংস্কারের জন্য আমরা একাধিকবার লিখিত ভাবে মেয়র মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোন ধরনের সাড়া পাচ্ছি না। তবুও আমরা কাঠ দিয়ে যতটুকু পারতেছি জনগণের সুবিধার জন্য মেরামত করে চালিয়ে যাচ্ছি ।’

জুলধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী নুরুল হকের মন্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কর্ণফুলী উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘যতদুর জেনেছি ১১ নম্বর মাতব্বব ঘাটটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করে থাকেন। ঘাট সংস্কার করে সেবার মান বাড়াতে চসিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে আইনি নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘বিষয়টি ইজারাদারগণ অবগত করলেও সেভাবে কাজ করা হয়নি। তবুও আমরা ১১ নম্বর ঘাটের সর্বশেষ খবর নিয়ে যাত্রীসেবার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সামনের মিটিং এ মেয়র মহোদয়কে অবগত করব।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button