অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ

বাজেটে ঘোষিত সিদ্ধান্ত মানছে না তামাক কোম্পানিগুলো, বেশি দামে সিগারেট বিক্রি অব্যাহত

 

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

বাজেটে ঘোষিত সিদ্ধান্ত মানছে না তামাক কোম্পানিগুলো, বেশি দামে সিগারেট বিক্রি অব্যাহত

প্রস্তাবিত বাজেটে ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট সরবরাহ নিশ্চিতকরণ’ এর কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত রাজস্ব আদায় ও তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসআরও জারি করে ‘প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সুস্পষ্ট লক্ষণীয় ও অনপনীয়ভাবে মুদ্রিত’ থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, “সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের অধিক মূল্যে কোন পর্যায়েই সিগারেট বিক্রয় করা যাইবে না”। কিন্তু বাজেটে ঘোষিত এই সিদ্ধান্ত মানছে না তামাক কোম্পানিগুলো, তারা বেশিদামে সিগারেট বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। আজ জাতীয় বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা একথা বলেন।

আজ মঙ্গলবার (১২ জুন ২০২৩) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বিএনটিটিপি ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত আয়োজনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও এর ওপর করারোপ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও বাটা’র উপদেষ্টা আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রতিনিধি হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান, সাংবাদিক ও গবেষক সুশান্ত সিনহা ও  বাটার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সিগারেটের প্যাকেটে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এই ফাঁকি বন্ধে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট সরবরাহ নিশ্চিতকরণের সিদ্ধান্তের ফলে কর ফাঁকি রোধ করা যাবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাজার পরিদর্শনে দেখা যায় বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটরে মূল্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বৃদ্ধির হার গতবছরের চেয়েও বেশি। অন্য দিকে বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর ধরা হলেও তামাক কোম্পানি এখনো পুরানো মূল্য মুদ্রিত সিগারেট বিক্রি করে চলেছে। এই অবস্থায় বাজেটে ঘোষিত সিদ্ধান্তের সুফল নির্ভর করছে নিয়মিত নজরদারি ও কঠোর বাস্তবায়নের ওপর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে এই সিদ্ধান্তের যথাযথ প্রয়োগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, এবারের বাজেটেও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে অ্যাডভেলোরেম করারোপ পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ পদ্ধতির প্রচলন না করায় তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি প্রতিরোধে কার্যকর সফলতা পাওয়া যাবে না। তাই রাজস্ব বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অতিদ্রুত সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপ করা জরুরি।

তারা আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের নামমাত্র মূল্য বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেনা বরং মূল্য স্ফিতি ও ক্রয়-সমর্থ বৃদ্ধির বিচারে এই দ্রব্য ভোক্তার কাছে আরো সস্তা হয়ে পড়বে। নিম্ন স্তরের করহার মাত্র ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা মূল্য বৃদ্ধি আদতে তামাক কোম্পনিকেই লাভবান করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button