বিশেষ খবর

যশোরে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের নির্বাচনী এ্যাকশন-শো 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪। ৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। প্রেক্ষাপট যশোর। এখানে পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। তাকে বদলী করতে জাতীয় পার্টির স্থানীয় প্রার্থীরা আবেদন করেন। পরে তারা হাই কমান্ডের মধ্যস্থতায় আবেদন তুলে নেন। সেসময় যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার বলেছিলেন তিনি অফিশিয়াল শো করে পুলিশ কে আরো উপরে তুলবেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্বল হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তিনি যে কথা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তার নিকটতম আত্মীয় নির্বাচন করলেও তিনি কোন পক্ষপাতিত্ব করবেন না। শেষ পর্যন্ত এসপি তার কথা রেখেছেন। নির্বাচনে তিনি নিয়েছিলেন চমকপ্রদ কঠোর পদক্ষেপ। সমগ্র যশোরে ১/২টি কেন্দ্র ব্যতিত অন্য কোথাও কোন গোলযোগ হতে দেখা যায়নি। টনটাইট প্রশাসনিক এ্যাকশনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচন।

বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ভোট কেন্দ্রের ভিতরে বাইরে কোথাও কোন জটলা কেউ করতে পারেনি। এমনকি জাল ভোট কোথাও চোখে পড়েনি। যেমন প্রশাসনিক এ্যাকশন ছিল চোখে পড়ার মত, তেমনি কেন্দ্রের বাইরেও পুলিশ প্রশাসন ছিল প্রশংসনীয় এ্যাকশনে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৪ ডিসেম্বর যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে বদলির আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন জেলার ছয় আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার যশোর জেলার মনিরামপুর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ‘জামাই’ হিসাবে পরিচিত। যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। পুলিশ সুপার প্রলয়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করেন লাঙ্গল প্রতীকের ওই ছয় প্রার্থী।

এসপিকে বদলি করতে ১৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দেন তারা। চিঠিতে বলা হয়, প্রলয় কুমার জোয়ারদার যশোরে প্রায় তিন বছর কর্মরত আছেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুরবাড়ি মনিরামপুর উপজেলায়। তার শ্বশুর মনিরামপুরের মৃত চৈতন্য কুমার বিশ্বাস।

 আত্মীয়তার কারণে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার মনিরামপুর উপজেলাসহ সমগ্র যশোরের বহু মানুষের সাথে সম্পর্কিত।

এ ছাড়া তিনি মনিরামপুর আসনের বর্তমান সংসদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের জামাই হিসাবে সুপরিচিত এবং শার্শার সংসদ সদস্য আফিল উদ্দীনের সঙ্গে রয়েছে তার চরম ব্যক্তিগত সম্পর্ক। যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।

আবেদনে বলা হয়, স্বপন ভট্টাচার্যের সাথে প্রলয় জোয়ারদারের গভীর সম্পর্ক থাকার কারণে মণিরামপুর আসনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া ভোটাররা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আছে। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হয়েছেন। সাধারণত নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা আগের পদে কর্মরত থাকেন না। কিন্তু তিনি উদ্দেশ্যমূলক ভাবে পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

আবেদনে আরো বলা হয়, সুষ্ঠু ভোটের জন্য মাঠে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হলে এই পুলিশ সুপারকে বদলি করে নতুন এসপি নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এর আগে ৮ ডিসেম্বর যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই আবেদনেও বলা হয়, এসপি প্রলয় জোয়ারদারের শ্বশুরবাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ-সদস্য পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য এসপির শ্বশুর হিসাবে এলাকায় পরিচিত।

লিখিত আবেদনে মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম মজিদ, বর্তমান সহসভাপতি গৌর কুমার ঘোষ, আইনবিষয়ক সম্পাদক সুব্রত ব্যানার্জি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার স্বাক্ষর করেন।

আবেদনে আওয়ামী লীগ নেতারাও উল্লে­খ করেন, ‘পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যশোরে প্রায় তিন বছর কর্মরত আছেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুরবাড়ি মনিরামপুরে। এছাড়া তিনি যশোর-৫ মনিরামপুরের সংসদ-সদস্য এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের জামাই হিসাবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। স্বপন কুমার ভট্টাচার্য এবারও একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। আত্মীয়তার কারণ ছাড়াও বর্তমান যশোর-১ আসনের সংসদ-সদস্য আফিল উদ্দিনসহ অনেকের সঙ্গে তার ব্যক্তিপর্যায়ের সুসম্পর্ক রয়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন।’

আবেদনে আরও বলা হয়, ‘সম্প্রতি প্রলয় কুমার জোয়ারদার নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হয়েছেন। সাধারণত নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা পূর্ব পদে কর্মরত থাকেন না। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন জয়ী হতে না পারে, সেজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন যশোর-৫ (মনিরামপুর)-সহ বেশির ভাগ আসনে। মনিরামপুরসহ যশোরের অন্যান্য আসনে ভোটারদের শঙ্কামুক্ত রেখে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এসপিকে বদলির আবেদন জানানো হয়েছে।

এরপর এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। কথা দেন কোন প্রকার প্রভাব তাকে কাবু করতে পারবেনা। তিনি নির্বাচন শেষে প্রমাণ করে দেবেন দায়িত্ব আত্মীয়তার চেয়ে অনেক বড়। সেই লক্ষে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামান যশোরের পুলিশ প্রশাসনকে। নির্বাচনে সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে তিনি নিয়েছিলেন কঠোর পদক্ষেপ। ভোটের মাঠে, আগে পরে যাতে কোন ধরণের গোলযোগ কোথাও হতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি করতে তিনি নিজেও মাঠে নেমে পড়েন। গোটা যশোরকে ঢেকে ফেলেন নিরাপত্তার চাদরে। জেলার বিভিন্ন স্পটে স্থাপন করেন ২ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। যাতে কেউ কোন অপরাধ করে বেরিয়ে যেতে না পারে।

বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ভোট কেন্দ্রের ভিতরে বাইরে কোথাও কোন জটলা কেউ করতে পারেনি। এমনকি জাল ভোট কোথাও চোখে পড়েনি। যেমন প্রশাসনিক এ্যাকশন ছিল চোখে পড়ার মত, তেমনি কেন্দ্রের বাইরেও পুলিশ প্রশাসন ছিল প্রশংসনীয় এ্যাকশনে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button