বিশেষ খবর

পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরে ট্রেন ছুটবে 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সড়কপথে রাজধানী থেকে যশোরের দূরত্ব নামিয়েছে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়। ট্রেনে তা আরও কমবে। ৮০ শতাংশ এগিয়েছে রেললিংক প্রকল্পের কাজ। জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে ছুটছে ট্রেন। সেতুর রেললিংক প্রকল্পের যশোর অংশের কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই ট্রেন যশোরে ছুটবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের যশোর অংশের কাজ। এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ। শেষের পথে তিনটি রেলস্টেশন নির্মাণের কাজও। একইসঙ্গে চলছে লেভেল ক্রসিং ও ইলেক্ট্রিকের কাজ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সমুদয় কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে তাতে আরেক পালক যুক্ত হবে এই রেললিংক চালু হওয়ার পর। সড়কপথে এখন মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় যশোর থেকে ঢাকায় আসা সম্ভব হচ্ছে। চলমান রেললিংক প্রকল্প শেষ হলে সড়কের পাশাপাশি নড়াইল, গোপালগঞ্জ হয়ে রেলপথে যশোর থেকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় আসা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। রেলওয়ে গ্রুপটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের যশোর অংশে প্রায় ১১ কিলোমিটার নতুন রেলপথের রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শেষের পথে তিনটি রেলস্টেশন নির্মাণের কাজও। একইসঙ্গে চলছে লেভেল ক্রসিংয়ের কাজ ও ইলেকট্রিকের কাজ।

এ ব্যাপারে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা রেললিংক প্রজেক্টের ডিভিশন টু ইউনিট ফাইভের তিনটি রেল স্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার কাছাকাছি। রূপদিয়া স্টেশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। পদ্মবেলা স্টেশনের কাজ এক থেকে দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবো বলে আশাবাদী। এছাড়া সিঙ্গিয়া রেলস্টেশনের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই ডিভিশনের আওতায় ১১টি রেলক্রসিং আছে; তার মধ্যে ৮টির নির্মাণ কাজ চলমান। আগামী জুনের মধ্যে আমাদের সব কাজ শেষ হবে।

চায়না রেলওয়ে গ্রুপের ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুস সালেকিন বলেন, পদ্মা রেললিংক প্রজেক্টের ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপদিয়া স্টেশনের ইলেকট্রিকের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এছাড়া জামদিয়া, পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়া স্টেশনের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইলেকট্রিকের কাজগুলো শেষ করতে পারবো।

চায়না রেলওয়ে গ্রুপের রেল ট্রাক ইঞ্জিনিয়ার ইমরান কায়েস সরকার বলেন, এ প্রজেক্টে আমাদের ব্লাস্ট ফিল্ম চলছে। রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজ শেষ। ফেসপ্লেট জয়েন আর ফ্লাশবার্ড ওয়েল্ডিং কাজ চলছে। শুধুমাত্র অ্যালাইনমেন্ট বাকি থাকছে আমাদের। এরইমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণে ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে চীন এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগ ২০ হাজার কোটি টাকা।

রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোর গিয়ে শেষ হবে। এই প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ গত বছরের ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু অতিক্রম করে চালু হওয়া ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে নিয়মিত চলাচল করছে ট্রেন। নাশকতার আগুনে পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেসও আগের শিডিউলে চলছে।

আর যশোর পর্যন্ত নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। এরইমধ্যে মধুমতি, চিত্রা, তুলারামপুর, আর্ফাসহ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ছোটবড় ৩২টি রেল সেতু, ৮৬টি কালভার্ট, ৮২টি আন্ডারপাস সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনটি রেলস্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যাতায়াত ও বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ রেলপথ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button