চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বিপদসীমার কাছে

 

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা বা বিপদসীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি ছিল ১০৭.৬৩ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যেখানে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
কাপ্তাই পিডিবি’র সূত্র জানা যায়, ১০৮ এমএসএল লেবেলে পানি পৌঁছে গেলে বাঁধ কর্তৃপক্ষ পানি ছাড়ার বিষয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে বাঁধের স্প্রীল ওয়ে খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হলেও এ নিয়ে আতংকিত হবার মতো কিছু নেই। যদি লেকের পানির স্তর ১০৮ এমএসএল ছুঁয়ে ফেলে তখন বাঁধের স্প্রীলওয়ের ১৬টি গেইটের প্রতিটি ২ এমএসএল থেকে ৪ অথবা ৬ এমএসএল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হতে পারে। কখনো কখনো পানির চাপ বুঝে ১০ এমএসএল পর্যন্ত খুলে দিয়ে থাকে। এতে লেক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ হাজার কিউসেক থেকে শুরু করে দুই লাখ কিউসেক পর্যন্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হয়, এইসময় ৫ লাখ কিউসেক পর্যন্ত পানি ছাড়ার ক্ষমতা রয়েছে। এতে কর্ণফুলী নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হবে, চন্দ্রঘোনা ফেরী চলাচল বন্ধ থাকবে। কাপ্তাই লেকের নিম্নাঞ্চল রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, পটিয়ার কিছু অংশ এবং আনোয়ারা অঞ্চলে নদী ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে, পাশাপাশি নদী তীরবর্তী ফসলী জমি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হতে পারে। পরে ক্রমান্বয়ে নদীর জোয়ার ভাটার হয়ে আস্তে আস্তে পানি কমতে শুরু করে। তবে, কাপ্তাই লেকের পানি ছেড়ে দিলে খুব ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয় না। প্রায় লেকের পানি ছাড়া হয়, কখনোই এই পানিতে বড় কোন বন্যার সৃষ্টি করেনি।
কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার বিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, কাপ্তাই হ্রদের গেটগুলো খুলে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া সবসময়ই কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়। এরপর তারাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এবারও গেট খোলার অবস্থা তৈরি হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের বৃহত্তম বাঁধ ও একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই হ্রদটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৫৭ সালে কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণ কার্য শুরু হয় ও ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। সে সময় বাঁধে পানি নির্গমন পথ জলকপাট এবং দুটি ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপলান টারবাইন জেনারেটর নির্মিত হয়। সম্প্রতি কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রে দৈনিক ৫টি ইউনিটে সর্বোচ্চ ২১৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button