ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি রোধে কঠোর রেলওয়ে প্রশাসন
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানের ঈদে অতিরিক্ত বগি, স্পেশাল ট্রেন, যাত্রী সেবায় কঠোর মনিটরিং এবং টিকেট কালোবাজারি রোধে মাঠে থাকবেন রেলওয়ে প্রশাসন। এতে কমলাপুর, এয়ারপোর্ট এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশনসহ বিভিন্ন ষ্টেশনে কঠোর নজরদারিতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এতে ট্রেনে যাত্রী সেবায় কোন ধরণের অসুবিধা না হয় এবং ট্রেন ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থানে পাথর ছুড়ে দেয়ার বিষয়ে সর্তক থাকা, টিকেট কালোবাজারি রোধে সর্তক থাকাসহ বিভিন্ন সেবায় মাঠে থাকবেন রেলওয়ে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তবে রেলের স্ব স্ব ষ্টেশনসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাত্রী সেবায় অসহযোগিতা এবং টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত প্রশাসনিক শাস্তি ও কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে টিকিট কালোবাজারকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া আছে। যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা, টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে ২৪ ঘণ্টাই নজরদারিতে রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এই নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন কোনও হয়রানির শিকার না হয়। তবে রেলওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করার কথাও বলা হয়েছে এবং রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সচিব এবং ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্তারা কঠোর মনিটরিং এ রাখছেন বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই ট্রেনের টিকেটের চাহিদা বেশী থাকার কারণে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয় রেল প্রশাসনের। একই সঙ্গে স্টেশনগুলোকে কেন্দ্র করে কালোবাজারিরা সক্রিয় থাকে। ঈদের সময় এই চক্র আরও বেশি সক্রিয় হয়। যদিও চলতি বছর রেল কর্তৃপক্ষ রেলের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোকে বাধ্যতামূলক করেছেন।
অভিযোগ আছে, টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে খোদ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ রেলের অনলাইন সার্ভার সহজের (সাবেক সিএনএস) চিহ্নিত কর্মচারী এবং রেলওয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। তারাই কৌশলে টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের আরএনবির সিপাহি রহিম, শাকিল খান, সামসুজ্জামান, আসাদুজ্জামান, একজন হাবিলদারসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এদের মধ্যে অনেকেই বেশ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশনে কর্মরত রয়েছেন। ইতিমধ্যে কালোবাজারিসহ নানা অনিয়মের কারণে আরএনবির প্রধান জহিরুল ইসলামের নির্দেশে কিছু আরএনবির সদস্যকে বদলী করলেও কৌশলে ষ্টেশনে অনিয়ম-কালোবাজারি করেই চলেছে বদলীকৃতসহ অন্যরা। অনেকের বিরুদ্ধে আবার গোয়েন্দা সংস্থার বরাবরে অভিযোগ রয়েছে। গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট কালোবাজারি চক্রের দুই সদস্যকে আটকের পর তারা জানায়, খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই তাদের টিকিট বিক্রির জন্য দেয়।
আরও জানা গেছে, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও কোরবানির ঈদযাত্রা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত ১ জুলাই থেকেই। যা চলবে প্রতিদিনই বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ৫ জুলাই পর্যন্ত যাত্রীদের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ জহুরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেন। এর আগে যাত্রী সেবা নিশ্চিতের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) আবুল কালাম চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
শনিবার দেওয়া হয়েছে ৬ জুলাইয়ের টিকিট, রবিবার দেওয়া হবে ৭ জুলাইয়ের টিকিট, সোমবার দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের টিকিট এবং মঙ্গলবার দেওয়া হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট। অগ্রিম টিকিটের পাশাপাশি নিয়মিত সকল ট্রেনের টিকিটও যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের অর্ধেক টিকিট কাউন্টারে এবং অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদে প্রত্যেক ট্রেনে অতিরিক্ত বগি যুক্ত হবে। ৭ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন দুটি স্পেশাল ট্রেন চলবে।
টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধের ব্যবস্থার বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সাহায্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।