হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন হেলস
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেড় কোনও খেলা না থাকায় ফাঁকা সময়টা কেপ টাউনে বান্ধবীর সঙ্গে একান্তে কাটাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন অ্যালেক্স হেলস। নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে সেই তিনি এখন করাচিতে। সাড়ে তিন বছরের যন্ত্রণাময় অপেক্ষা শেষে এখন তিনি ক্ষণ গুনছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে নতুন অধ্যায় শুরুর আগে আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান পেছন ফিরে তাকিয়ে বললেন, তিনি একরকম হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই তিনি ডুবে গিয়েছিলেন হতাশায়। জেসন রয়ের পড়তি ফর্ম তার মনে আশার সঞ্চার করেছিল, এই দফায় সুযোগ মিলতেও পারে। কিন্তু রয় বাদ পড়লেও তার ফেরা হলো না। হতাশ ও বিষণ্ণ হেলস তখন নিজের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি-কে ফোন করে অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই জানতে চান তাকে উপেক্ষা করার কারণ।
এরপর সুযোগটা এসে যায় অভাবনীয়ভাবে। গলফ খেলতে গিয়ে অদ্ভুতুড়ে চোটে পড়েন জনি বেয়ারস্টো। তার জায়গায় ডাক পান হেলস। নাটকীয় পালাবদলের পর এখন তিনি ৭ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে। সামনে খেলবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। দলে ফেরার পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হেলস বললেন, আশা করা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
হেলস বলেন, ভেবেছিলাম, নিশ্চিতভাবেই আর কখনও সুযোগ আসবে না আমার। মাঝেমধ্যেই মনে হতো, আর ডাক পাব না। এই তিন বছর ধরে ক্যারিয়ারের সেরা ক্রিকেট খেলেছি আমি, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর হবে না বলেই মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত এই সুযোগটা পেয়ে তাই আমি দারুণ গর্বিত এবং সুযোগ কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছি। আমি বিশ্বাস করি, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারি আমি।
এত লম্বা সময় তাকে বাইরে রাখার মূল কারণ ছিল শৃঙ্খলা ও বিশ্বাসের ঘাটতি। ব্যাট হাতে ২২ গজে তার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট হোক বা বিগ ব্যাশ কিংবা পিএসএল, ক্রিকেট দুনিয়ার নানা প্রান্তে ২০ ওভারের ক্রিকেটে দাপুটে পারফরম্যান্স তার। কিন্তু ইংল্যান্ড দলের দুয়ার ছিল বন্ধ।
গভীর রাতে পানশালায় মারামারি থেকে শুরু করে নানা সময়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় জড়ান তিনি। বারবার পার পেলেও ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ড্রাগ নেওয়ার ঘটনায় আবার জায়গা হারান দলে। এরপর থেকে তার দিকে আর ফিরে তাকানো হয়নি। বিশেষ করে সেই সময়ের অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যানের কাছে একদমই শেষ হয়ে যায় হেলসের অধ্যায়। মর্গ্যান প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, দলীয় মূল্যবোধকে বারবার অবজ্ঞা করেছেন হেলস ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন ড্রেসিং রুমের।
তার পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। মর্গ্যান নিজেও অবসরে গছেন। জাতীয় দলের বাইরে থাকার এই সাড়ে তিন বছরে নতুন করে শৃঙ্খলাভঙ্গের কোনো ঘটনায় তিনি জড়াননি। রানের স্রোত বইয়ে দিয়েছেন ২০ ওভারের ক্রিকেটে। তাই তার ভেতর দানা বেঁধেছিল আশা। এবার শুরুতে যখন দলে জায়গা পেলেন না, নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেননি ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ফোন করে সরাসরিই জানতে চান কারণ। সেই ফোনালাপের বিষয়বস্তু লুকালেন না তিনি।
তিনি জানান, বেশ দৃঢ় হয়ে অনেকটা জোর নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলি। আমি আসলে সত্যিটা জানতে মুখিয়ে ছিলাম যে, আসলেই আমার কোনো সুযোগ আছে নাকি তারা মিডিয়ার সামনে মাত্র বলার জন্য বলে থাকে। বেশ জোর নিয়েই তাই তাকে চেপে ধরি। আমার আসলে তখন হারানোর কিছু ছিল না।
হেলস বলেন, আমার মনে হয়েছে, দলে জায়গা আমার প্রাপ্য এবং শুধু ক্রিকেটীয় দিক থেকে বিবেচনা করলে, আমাকে বাইরে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করার অধিকার আমার আছে। নিজের ভেতরে যে তাড়না, তা দেখানোর অধিকার আছে। আমাকে সুযোগ দিলে তা কাজে লাগানোর সামর্থ্য আমার যথেষ্টরও বেশি আছে বলেই মনে করি, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায়।
বিগ ব্যাশে গত তিন মৌসুম মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন হেলস। তার প্রবল আত্মবিশ্বাসের কারণ তাই আছে বটে। যার অনমনীয় মনোভাবের কারণে এত লম্বা সময় বাইরে থাকতে হলো তাকে, সেই মর্গ্যানের প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই হেলসের। বরং দায় দিচ্ছেন তিনি নিজেকেই।
তিনি বলেন, যে ধরনের কাজ আমি করেছি, সেই সবের জন্য কাউকে দায় দেওয়া যায় না। তবে তিন বছর অনেক, অনেক বেশিই লম্বা সময়, বিশেষ করে একজন অ্যাথলেটের জন্য। খুবই যন্ত্রণাময় ছিল সময়টা।
আন্তর্জাতিক আঙিনায় আবার নিজেকে মেলে ধরার লড়াই শুরু তার মঙ্গলবার থেকে। করাচিতে সেদিনই শুরু পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সিরিজ।