জঙ্গি ছিনতাইয়ে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল অমি : সিটিটিসি
আদালত চত্বরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪)। জঙ্গিদের টার্গেট ছিলো ৪ জনকে ছিনিয়ে নেয়া। এই চারজনের মধ্যে প্রধান টার্গেট ছিলো আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সামস। ওই দিন পালানোর সময় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে বুধবার রাতে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ইনভেস্টিগেশন বিভাগ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার আসামি মেহেদী হাসান অমিকে গ্রেফতার করে।
আসাদুজ্জামান বলেন, ২০ নভেম্বর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা সিএমএম কোর্ট চত্বর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংঘটন আনসার-আল-ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। উক্ত জঙ্গি আসামী ছিনতাই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান অমি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এবং ছিনতাইয়ের দিন পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মোটা অঙ্কের টাকা হাত খরচ দেয়।
তিনি বলেন, আনসার-আল-ইসলামের শীর্ষ নেতা বরখাস্তকৃত মেজর জিয়ার সাথে সমন্বয় পূর্বক সংগঠনের আসকরি শাখার সদস্যদের রিক্রুট করত মেহেদী।
জামিনে বের হয়ে গত পাঁচ বছর ধরে হাজিরা দিচ্ছে অমি। জামিনে থাকলেও অমি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল।
এখানে মনিটরিং এর ঘাটতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনিটরিং করা হয় কিন্তু ঘরে বসেও এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখে….।
দুইজন চিকিৎসককে আমরা ধরেছি। তারাতো ঘরে বসেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। সুতরাং মনিটরিং করা হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে মনিটরিং করা হয় না সব সময়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অমিকে পুলিশ হেফাজত চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হেফাজত পাওয়ার পর সেইদিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা অন্য অপরাধীদের চেয়ে ভিন্ন, তাদের ধরলে পাঁচদিন দশ দিনের প্রশ্ন অবান্তর। জঙ্গিরা বিশেষ করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ‘কাটআউট’ সিস্টেমে থাকে। তাই তাদেরকে ধরতে অনেক বেগ পেতে হয়।
অমি ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয় এবং তার আগে হিযবুত তাহরীর সদস্য ছিল। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কার্যকলাপ জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, বাড্ডায় সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১০ ও ২০১২ সালে সিলেট থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দুটি মামলা রয়েছে। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় যে মামলা হয়েছে, সে মামলায় ১৪ নম্বর আসামি সে (অমি)।
২০ জনকে আসামি করে করা ওই মামলায় রাফিও আসামি; তবে তিনি জামিনে মুক্ত ছিলেন। তার সঙ্গে জামিনে থাকা আরেক আসামি হলেন ঈদী আমিন।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর কোতোয়ালি থানায় পুলিশ যে মামলা করেছে, তাতে বলা হয়েছে, জামিনে থাকা অমি ও আমিন সেদিন হাজিরা দিতে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়েছিলেন। জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় এই দুজনকেই আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, পলাতক জিয়ার নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমানের নেতৃত্বে সেই অভিযান চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পলাতক দুই জঙ্গির হদিস বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণাও করেছে পুলিশ।