সত্যিই কি রেমিট্যান্স আয়ে গোটা বিশ্বকে পিছনে ফেলতে যাচ্ছে ভারত?
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারত। এশিয়ার দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১৪১ কোটিরও বেশি। অর্থনীতি বিবেচনায় ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যকে টপকে এই তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে আসে ভারত। বর্তমানে দেশটির জিডিপির আকার ৩.৫৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থনীতিতে বিশ্বে পঞ্চম বৃহৎ হলেও এবার প্রবাসী আয়ে গোটা বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের অর্জন করতে পারে ভারত। এটি হলে ভারতই হবে বিশ্বের প্রথম দেশ যারা এক বছরে ১০০ বিলয়ন ডলার অর্জনের রেকর্ড করবে। কেননা, এখন পর্যন্ত কোনও দেশ এক বছরে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় করতে পারেনি।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছেন ১৮ মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয়। তাদের কাধে ভর করেই এই বিপুল রেমিট্যান্স পাওয়ায় রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, “মজুরি বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ওইসিডি দেশগুলোতে শক্তিশালী শ্রমবাজারের সুবাদে ভারতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।”
২০২১ সালের তুলনায় এ বছর ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ ১২ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ৩ শতাংশ।
মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের আয়ে ভর করেই এই বিশেষ মাইলফলক গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। তবে দেশটির রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন- রেমিট্যান্সের অর্থে পড়াশোনা করা ভারতীয় অনেক শিক্ষার্থী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুরের মতো বিভিন্ন উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ভালো চাকরি পেতে শুরু করেছে।
এছাড়া ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়নও রেমিট্যান্স বাড়াতে সহায়তা করেছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রাটির দর ১০ শতাংশ কমেছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে টাকা পাঠানোর খরচ ২৬ শতাংশ, থাইল্যান্ড থেকে ১৭ শতাংশ এবং জাপান থেকে ১৪ শতাংশ কমে গেছে।
তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৮১ হাজার ২৫৪ জন ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিকত্ব বিসর্জন দিয়েছেন। মহামারী-পরবর্তীকালে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে তাদের নীতিমালা শিথিল করায় এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।
তবে এ বছর ভারত ও নেপালের প্রবাসী আয় বাড়লেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের রেমিট্যান্স গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে গেছে।
উল্লেখ্য, এ বছর এখনও পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে ভারত। প্রবাসী আয় গ্রহণে ভারতের পরেই রয়েছে মেক্সিকো, চীন ও ফিলিপাইন।
এখন দেখার বিষয় বছর শেষে ভারতের প্রবাসী আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে কি না। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, সিএনএন, বিবিসি