খেলাবিনোদন

সীমানা পেরিয়ে ই-স্পোর্টস এর দুনিয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা

সবাইকে তাক লাগিয়ে পাঁচ জন মেয়ে সদস্যের একটি দল দেশের গেমিং প্রেক্ষাপটকে নিয়ে চলেছেন এক নতুন উচ্চতায়। স্পোর্টসের দুনিয়ায় এই অদম্য মেয়েদের সাম্প্রতিক অর্জনকে তুলে ধরার পথে জেরিন তাসনিমএর কিছু স্মৃতিচারণ।  

ঘণ্টারপর ঘণ্টা ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে আপ-ডাউন-লেফট-রাইট অ্যারো প্রেস করে এনএফএসের সকল বাঁধা পেরিয়ে গাড়ি চালানো হোক; কিংবা রোড র‍্যাশে রেস জেতার তুমুল চেষ্টায় জোরসে মোটরবাইক চালানো – ছোটবেলায় আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার মানেই আমার জন্য ছিল গেম খেলা। বড় হয়ে গেমিংয়ের প্রতি আমার আগ্রহ আরও বাড়তে থাকল। এ সময় আমি আমি বিভিন্ন গেমিং হাবে যাওয়া শুরু হয়। সেখানে বন্ধু-বান্ধব এবং আমার মতোই গেমিংপ্রেমীদের সাথে গেম খেলে দারুণ সময় কাটত!

সচরাচরই এই গেমিং হাবগুলোতে সেরা খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও টুর্নামেন্ট।বিজয়ীদের খাতায় আমি ও আমার দল নাম লিখিয়েছি বেশ কয়েকবার। সময়ের সাথে এই হাবগুলোর গুরুত্ব কমে যাওয়ায় এখন এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান।

ইদানিংকালে, বাংলাদেশের গেমাররা শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন।আন্তর্জাতিক গেমিং ক্ষেত্রেও তারা চমৎকার প্রতিভার প্রদর্শন করে নিজেদের নিয়ে যাচ্ছেন নতুন উচ্চতায় – ই-স্পোর্টসের দুনিয়ায় বাংলাদেশ তৈরি করছে নতুন মাইলফলক।

‘গ্লোবালই-স্পোর্টস গেমস ২০২২’ -এর ডটা ২ প্রতিযোগিতায় এই অদম্য মেয়েদের দল বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে প্রদর্শন করেছে দারুণ পারফরমেন্স। একটু জেনে নেয়া যাক তাদের সম্পর্কে।

বিশ্বব্যাপী গেম ও ই-স্পোর্টস নিয়ে সর্বশেষ খবর পেতে ভিজিট করুন: পারিম্যাচ নিউজ।

নুশিন মিরাজেইন রেজা

গেমিংয়ের প্রতি অশেষ আগ্রহ স্নাতক শিক্ষার্থী ও টিম মেইহেমের ক্যাপ্টেন নুশিনের। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও পাঁচ জনের দৃঢ় আগ্রহের কারণেই দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে ‘মিরাজেইন’।‘মেয়ে’ গেমার হিসেবে সমাজের নানান কটু কথা ছিল নুশানের গেমিং যাত্রায় প্রধান বাঁধা। তা স্বত্বেও ধারাবাহিক অনুশীলন চালিয়ে নিজের প্রতিভায় তিনি এগিয়ে চলেছেন সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে।

আনিকা নুবলেট তাবাসসুম মেধা

সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্রিমিংয়ে প্রায়ই দেখা যায় মেধার খেলার কৌশল।নিজের খেলার কৌশলের মাধ্যমেই গেমার কমিউনিটিতে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন আলাদা হিসেবে। মেধার জন্য গেমিং তার লাইফস্টাইলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু মেয়ে হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক গেমিংয়ে অংশগ্রহণ করা নিয়ে তাকেও সহ্য করতে হয়েছে নানা কটু কথা।

কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে তিনি নিজের মত এগিয়ে চলেছেন নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে।

অশ্নান্দ্রিলা বোম্বাস্টিক পটেটো সাহা

দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ এই সদস্য সম্প্রতি এ-লেভেল সম্পন্ন করেছেন। তিনি ‘ডটা ২’ খেলছেন ছয় বছর ধরে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে উন্নত অবকাঠামোর সহযোগিতায় পেশাদার গেমার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান।

তাসনিম লিগাল গার্ল তওফিক

স্নাতক শিক্ষার্থী তাসনিমের তার দলের সদস্যদের সাথে পরিচয় হয় গেমিংয়ের প্রতি তুমুল আগ্রহের তাগিদেই।তিনি গেম খেলছেন বহু বছর ধরে। টিম মেইহেমের সদস্যদের সাথে অসংখ্য ম্যাচ খেলতে খেলতেই তারা একসাথে অর্জন করেছেন অনন্য এক মাইলফলক। নিজেদের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একে অপরের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার ফলেই তারা একতাবদ্ধ থাকতে পেরেছেন।

সাব্রিমা সানশাইন সুমাইয়া

সম্প্রতি স্নাতক শেষ করা সাব্রিমা গেমিং শুরু করেছেন ২০১৬ সালে। নিজের খেলা সকল গেমের মধ্যে ‘ডটা ২’ তার সব থেকে প্রিয়।অনিবার্য কারণবশত, গেমিংয়ের ক্ষেত্রে তার ২ বছরের একটি বিরতি পরে; কিন্তু ধারাবাহিক অনুশীলন ও অনবদ্য প্রচেষ্টায় তিনি ফিরেছেন গেমিংয়ের দুনিয়ায়, অর্জন করেছেন অভূতপূর্ব কৃতিত্ব।

বিশ্বসেরা ই-স্পোর্টস প্লেয়াররা তাদের ই-স্পোর্টস কন্টেন্ট হাব হিসেবে বেছে নিয়েছেন পারিম্যাচ নিউজ ‘কে!

দ্য গ্লোবাল ইস্পোর্টস ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইলেকট্রনিক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিওয়াইডিইএসএ) আয়োজিত ‘ডটা ২’ উইমেন্স ন্যাশনাল টিম ট্রাইআউট ফর বাংলাদেশে, কোচ সাদমান ‘জিমি’ আবিদুর রহমানের সহায়তায় এই পাঁচ জন মেয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের। সেখানে সাউথ এশিয়া গ্রুপ স্টেজে তারা টক্কর দেয় টিম সিঙ্গাপুর ও টিম শ্রীলঙ্কাকে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button