বিশেষ খবরবিশ্ব

সমরেশ মজুমদারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, উত্তরাধিকার, অর্জুন, সাতকাহন-সহ অসংখ্য গল্পের স্রষ্ঠা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নেমেছে।

মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে তার মরদেহ কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে বের করা হয়। এরপর তা নেওয়া হয় শহরের শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে।

সকাল ৯টা থেকে ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ওই বাড়িতেই শায়িত ছিল সমরেশ মজুমদারের নিথর দেহ। এদিন সকালে সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সাহিত্যিক ও গুণমুগ্ধ অসংখ্য মানুষ।

সকাল থেকেই বাবার মরদেহের সামনে বসে ছিলেন বড় মেয়ে দোয়েল এবং ছোট মেয়ে পরমা।

তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কলকাতার মেয়র পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইএম’র রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব, রমনা চক্রবর্তী, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের মুখপাত্র আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, লেখক ও কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক সংস্থা ‘কলকাতা বুক সেলারস অ্যান্ড গিল্ডে’র সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, লেখক এবং প্রকাশক সুধাংশু শেখর দে, লেখক ইমানুল হক, অভিনেতা দুলাল লাহিড়ীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়াত সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানান ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন। কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকেও এদিন শ্রদ্ধা জানানো হয়।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন “যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কখনও মারা যান না। লেখা, সৃষ্টি, রচনার মধ্যে দিয়ে তিনি সারাজীবন বেঁচে থাকেন। মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন। যতবার তার বইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি হবে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। বাংলার পাশাপাশি সমস্ত পাঠক ও মানুষের হৃদয় তিনি স্পর্শ করেছেন। আর সেই কারণেই বাংলাদেশ, ঢাকা, সুদূর লন্ডন থেকে শোকবার্তা আসছে। কারণ সমরেশ মজুমদারের লেখা সেখানকার মানুষের কাছে পৌঁছেছে, সেখানকার মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়েছে।”

মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “সৃষ্টিটা থেকে যাবে, আবার স্রষ্টাকেও বাঁচিয়ে রাখা যায় তার সৃষ্টির রচনা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে। এত বড় মাপের লেখক হলেও তিনি সেভাবে নিজেকে জাহির করতেন না।”

মন্ত্রীর অভিমত, “সমরেশ মজুমদার কোনও ব্যক্তি নয় তিনি একটা প্রতিষ্ঠান।”

বিমান বসু বলেন, “সমরেশ মজুমদার তিনি তার জীবদ্দশায় কিছু দিয়েছেন। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তার সাহিত্য সম্ভার গড়ে উঠেছে। ফলে যারা তাকে বাস্তবের দর্পণে দেখেননি, তারা তাকে হারিয়ে ফেললেন। তারা আর তাকে পাবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “সমরেশের বই বাংলাদেশেও অসম্ভব জনপ্রিয়। তার কারণ, মাটির সোঁদা গন্ধ তার লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠত।”

আন্দালিব ইলিয়াস জানান, “সমরেশ মজুমদার একজন কিংবদন্তি লেখক উপন্যাসিক ছিলেন। তার প্রয়াণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের সকল জনগণ এবং উপ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি এখানে এসে শোক প্রকাশ করছি।  প্রয়াত সাহিত্যিকের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে। বাংলাদেশে সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। তার প্রতিটি বই বাংলাদেশের সব পাঠকই অসংখ্যবার পড়েছেন। তিনি তার সমকালীন জীবনকে উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ ধরনের লেখকরা সচরাচর আমাদের জীবনে আসেন না। তার এই চলে যাওয়া দুই বাংলার কাছেই অপূরণীয় ক্ষতি।”

উল্লেখ্য, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কলকাতার অ্যাপোলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সমরেশ মজুমদার। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button