বিশেষ খবররাজনীতি

বিএনপির ভরসা বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা ও ষড়যন্ত্র: হানিফ

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরসার জায়গা দেশের জনগণ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির ভরসা ষড়যন্ত্র এবং বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা। তারা ভাবছে বিদেশি প্রভুরাই তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে আহ্বান জানাব, নির্বাচনে অংশ নিন। আপনাদের তথাকথিত আন্দোলন মানুষ বহু দেখেছে। এতে কোনো লাভ হবে না।

রবিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত প্রয়াত চিত্রনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের শোক ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ২০১২ সালের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির আন্দোলন দেশের মানুষ দেখেছে। আন্দোলন করে কোনো কিছু করা যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। জনপ্রিয়তা যাচাই করতে হলে নির্বাচনে আসুন। বিদেশি প্রভুর কাছে ধরনা দিয়ে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। কারণ দেশের জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি দেশের কিছু তথাকথিত সুশীল, বুদ্ধিজীবী— তারা নির্বাচন নিয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার জন্য অনেকে ইঙ্গিত করেন এবং আরেকটি দল বিএনপি তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয় এমন ধোঁয়া তুলে, দেশকে অস্থিতিশীল করে আবারও সেই এক এগারোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করছে।

হানিফ বলেন, অনেকে বলেন বাংলাদেশে আবার এক-এগারো সরকার আসর সম্ভাবনা আছে কি না? দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, যারা এমন স্বপ্ন দেখেন সেনাসমর্থিত সরকারের স্বপ্ন দেখছেন তাদেরকে বলব ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। আপনাদের এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন থেকে যাবে। এক-এগারোর সরকার বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ নেই।

কারণ, ২০০৭ সালের আগে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল। তাদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের কারণে দেশ ধ্বংসের মুখে গিয়েছিল। সেই সময় আমরা বারবার বলেছিলাম, বিএনপি নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা আগলে রাখতে চায়। সেই আন্দোলনের মুখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হয়েছিল বলে এক-এগারোর সৃষ্টি হয়েছিল— বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়— এই সাড়ে ১৪ বছরে অন্ধকার বাংলাদেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছে। শেখ হাসিনা দক্ষতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে চরম দরিদ্র বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়নে বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত করেছেন। এই বাংলাদেশে এখন ষড়যন্ত্র করে কারো হাতে ক্ষমতা যাওয়ার সুযোগ নেই।

দেশের মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল জানিয়ে হানিফ বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে, অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্ত হয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল— আজ সেই গণতন্ত্র বিকশিত। আমরা যে উন্নয়নের ধারায় এগিয়েছিলাম, আমরা আজ সেই উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই বাংলাদেশে আর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। যারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বপ্ন দেখেন তাদের প্রতি জনগণের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করুন।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য কোনো পরামর্শ থাকলে দিন। আমাদের সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, আমরা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করতে বদ্ধপরিকর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে হানিফ বলেন, যারা নির্বাচনে অনিয়ম করবে তাদের নিষেধাজ্ঞা দিবে। আমরা অনিয়ম, বানচাল বা প্রভাব বিস্তার করতে চাই না। মার্কিন ভিসানীতিতে আমরা ভীত নই।

উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যদি কারো অবজারভেশন থাকে যত খুশি পর্যবেক্ষক পাঠান। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অসাংবিধানিক পন্থায় চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। বাংলার জনগণ সেই সুযোগ দিবে না।

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়াত এক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিএনপি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের তৈরি তা বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে। একাত্তরে জামায়াত অগ্নি-সন্ত্রাস, লুটপাটের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিল। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জামায়াতের বিকল্প হিসেবে পাকিস্তান বিএনপি গঠন করেছিল। এখন বিএনপি পাকিস্তানের ‘এ’ টিম আর জামায়াত ‘বি’ টিম— বলেন তিনি।

প্রয়াত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে হানিফ বলেন, অভিনেতা হিসেবে নয়, সংসদ সদস্য হিসেবে নয় সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে সম্মান জানাতে এসেছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন। তিনি বলেন, বাংলার মিয়া ভাই খ্যাত একজন বীর সেনানী আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি খুব বেশি ছবি করেছিলেন তা নয়। যা করেছিলেন হৃদয়ে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে। তার অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যেত।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট গঠন করে প্রতিবাদ করেছিলেন। আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। আজকের প্রজন্মের অনেকে তার আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে চলেছে, বলেন হানিফ।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি এম নাদিম মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় শোক ও স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. শরফুদ্দিন আহমেদ, ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন ও অভিনেতা জায়েদ খান। এছাড়াও ফারুকপুত্র রওশন হোসেন পাঠান শরত উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button