চট্টগ্রাম

চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পুলিশ হেফাজতে আটক

দ্বিতীয় সাব হেডিং: স্থায়ী ভাবে বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি ব্যবসায়িদের

ফের সিডিএ’র উচ্ছেদ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ‘পুরাতন ব্রিজঘাট’

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় ফের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৫ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকাল থেকে চলা টানা অভিযানে পুরাতন ব্রিজঘাটের কয়লার মাঠ ও সড়কের পাশে থাকা দোকান সমূহ উচ্ছেদ করা হয়েছে।

মাঠের সমস্ত স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে বাধা দেওয়ায় কয়লার মাঠের জমি দাবিদার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার সাদাত মোবারক ও রতন নামে এক যুবককে পুলিশ হেফাজতে আটকে রেখেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বেগম তাহমিনা আফরোজ চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু, সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান, সিডিএর সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক, পেশকার ফয়েজ আহমদ, অফিস সহকারী মিথু চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগেও গত ২৩ মে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় কাঁচা বাজার ও সড়কের পাশের দুই শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দিয়েছিলেন সিডিএ। দিনব্যাপী এই অভিযানে তখন নেতৃত্ব দেন স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। ওই সময় বিনা নোটিশে অভিযান চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বলেন,‘পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার ও পাশের সিডিএ খেলার মাঠ ও কয়লার মাঠের জায়গায়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) এর দখলীয় ও মালিকানাধীন জমি বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির। অধিগ্রহণ করা জমিটি রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট জমি। ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এলএ মামলা ও বিএস খতিয়ান মূলে জমিটি সিডিএ’র। তাই এ জমিতে থাকা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদে মামলার কোন বাধা নেই বলে তিনি জানান।

সিডিএ’র স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বেগম তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী বলেন, ‘এর আগেও এই জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু কাজ বাকি ছিল। তার অংশ হিসেবে আজ উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে।’

উচ্ছেদের বিষয়ে সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হয়েছে। ওই জমিতেই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবত কাঁচা বাজার বসিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন।’

জানা যায়,  দীর্ঘ ২০ বছরেও সড়ক প্রশস্ত কিংবা স্থায়ী বাজারের জন্য কোন প্রকল্পও গ্রহণ করেনি সিডিএ। কিন্তু হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযানে সাধারণ ব্যবসায়িদের খুব ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুরাতন ব্রিজঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহেদুর রহমান জাহেদ।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তার ওপর ঠেলায় বা ভ্যানে কাঁচাবাজার বিক্রি করবেন হয়তো। আমরা ব্যবসায়ীরা দ্রুত স্থায়ী বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।

যদিও দীর্ঘ ৪০ বছরেও স্থায়ীভাবে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাটে কোন কাঁচাবাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বিংবা ইউনিয়ন পরিষদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে, ব্যবসায়ীরা সিডিএ সড়ক দখল করে ব্যবসা করতেন দিনের পর দিন। এজন্য উচ্ছেদের পর ব্যবসায়ীরা সিডিএ’র ওই নির্ধারিত স্থানে স্থায়ী বাজার নির্মাণ করার জন্য দাবি তুলেছেন। কেননা ওখানে স্থায়ী কোনো কাঁচাবাজার নেই। অভিযান শেষ হলে আবারও নিমিষেই দখল হয়ে যায় এসব জায়গা। সড়কের পাশের জায়গা দখল করে বসত মাছ ও তরিতরকারির দোকান করতে শুরু করেন। এতে অপ্রশস্ত সড়কগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণে সৃষ্ট যানজটে বেড়েছে পথচলতি মানুষের ভোগান্তি।

স্থানীয়রা জানান, বাজার না থাকায় চরপাথরঘাটা ও চরলক্ষ্যার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার উচ্ছেদ করলেন সিডিএ, ক্ষতি হল ব্যবসায়ীর। উধাও হয়ে গেল পজিশন বিক্রি করা জমিদাররা। বিনা নোটিশে সিডিএ’র অভিযানে এর আগেও অন্তত পাঁচ শতাধিক দোকান গুড়িয়ে দিয়েছে। সিডিএর আকস্মিক অভিযান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের স্থায়ী ভাবে বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সিডিএ’র কাছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান শেষে নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান সেতুর পাশ থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় যেতে একটা ১৫ ফুটের নতুন রাস্তা তৈরি করবেন। পাশে থাকবে ড্রেন। সড়কটি পাশ ঘেঁষে যাবে আনোয়ার সিটি, ইউনিয়ন পরিষদ, হাজী টাওয়ার, সৈয়দপুর মার্কেট হয়ে নদী তীর। তবে স্থায়ী দোকান বা মার্কেট বসানো কোন কথা স্বীকার করেনি সিডিএর কোন মুখপাত্র।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button