চট্টগ্রাম

 জাল সনাক্তে ‘স্ট্যাম্প ইইডি লাইট ডিটেক্টর’ ব্যবহার জরুরী

চট্টগ্রামে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের তীব্র সংকট

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আদালতে হওয়া মামলা গ্রহণের পাশাপাশি জমি নিবন্ধনসহ নানা ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আবার যেখানে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। স্বল্পতা রয়েছে কার্টিজ পেপারেরও। এতে বিপাকে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

আদালতে মামলা করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আবেদন এবং আদেশ বা রায়ের অনুলিপি সংগ্রহের প্রতিটি পর্যায়ে সরকারকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। আদালতে এটি ‘কোর্ট ফি’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে জমি কেনা বা হস্তান্তর করতেও রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন দামের রেভিনিউ/জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প। জানা যায়, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখা থেকে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আনা হয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। কৃত্রিম সংকট থাকলে দুর করার জন্য।

সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৩৩টি ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক মামলা, ক্ষতিপূরণ, বাজারমূল্য আছে বা নেই– এ রকম স্থাবর সম্পত্তি, দখল পুনরুদ্ধার, নিষেধাজ্ঞা, মুসলিম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়, দলিল রদ, দলিল সংশোধন, চুক্তি রদ, ঘোষণা মামলা-পরবর্তী প্রতিকার, চুক্তি প্রবল, ইজমেন্ট অধিকার, বন্ধক খালাস, ফোরক্লোসার, মোহরানা, ভরণপোষণ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, বিবাহবিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, সাধারণ ঘোষণা, বাটোয়ারা ও পৃথক দখল, ভাড়া, ডিক্রি রদ, ঘোষণা ও নিষেধাজ্ঞা, আপিল, রিভিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হওয়া মামলা। এ ছাড়া জমি কেনাবেচাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহার হয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাস থেকে বাজারে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের স্বল্পতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে আইনি সেবাপ্রার্থীরা। প্রতিদিন গড়ে কয়েক শতাধিক মামলা হচ্ছে। প্রতিটি মামলায় কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একই অবস্থা অধস্তন চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতেও।

চট্টগ্রাম জজকোর্ট এর আইনজীবী আনোয়ারা হোসেন ও তৌফিকুল মওলা সুজন বলেন, বাজারে কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের স্বল্পতা থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছে জালিয়াত চক্র। নকল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি হচ্ছে। আদালতগুলোতে ‘স্ট্যাম্প ইইডি লাইট ডিটেক্টর’ ব্যবহার করা জরুরী, যাতে নকল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায় এবং ভূমি অফিসগুলোতে নকল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের ব্যবহার হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যায়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। জাল স্ট্যাম্পের কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে প্রয়োজনের তাগিদে অতিরিক্ত দামে স্ট্যাম্প কিনছেন বিচারপ্রার্থীরা ‘

অনেকেই জানান, চট্টগ্রাম জেলা আদালতের আশেপাশের দোকান, বার সমিতি ভবন, জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রাঙ্গণে অধিকাংশই স্ট্যাম্প ভেন্ডার নিয়মবহির্ভূতভাবে জেলা ট্রেজারি শাখা অননুমোদিত রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বিক্রি করছেন। আর জাল স্ট্যাম্পের কারণে গ্রাম থেকে যারা কোর্টে এসেছেন বিচারের জন্য তারা অজান্তেই জাল স্ট্যাম্পের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জানা গেছে, আদালতে ১৫০ টাকার কোর্ট ফি থেকে মামলাভেদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার কোর্ট ফির প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের সরকারি নথিতেও কোর্ট ফি লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে ২ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কোর্ট ফি চালু আছে। এই কোর্ট ফি বিক্রি করে সরকার প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। অন্যদিকে বাজারে বর্তমানে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের রেভিনিউ স্ট্যাম্প রয়েছে। দলিল মূল্য যা-ই হোক না কেন, নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যায়। এর বেশি মূল্যমানের স্ট্যাম্পের প্রয়োজন হলে বাকি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে।

চট্টগ্রাম দলিল লেখক সংগঠনের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘৫, ১০, ২০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প দেদারছে নকল পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরধারী দরকার। কেননা, আদালত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ট্যাম্প ভেন্ডররাই ডেমি, ফোলিও এবং কোর্ট ফি বিক্রি করে থাকেন। ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, ২ টাকার কোর্ট ফি ১০ টাকা, ১০ টাকার কোর্ট ফি ৪০ টাকা, ২০/৩০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির একজন বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরও ট্রেজারি বিভাগ থেকে চাহিদা অনুযায়ী কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হচ্ছে না। ট্রেজারি বিভাগ বলছে, ডলার সংকটের কারণে কাগজের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় স্ট্যাম্প ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না।’ আদৌও এসব গল্পকাহিনী সত্য কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিসের ট্রেজারী শাখা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস এবং নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ বলেন, ‘গতকালকেই গাড়ি এসেছে, কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প নামানো হয়েছে। আশা করি কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের সংকট আর হবে না। মাঝখানে গাড়ি আসেনি তাই একটু সংকট ছিল তা সত্য।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button