লাইফস্টাইল

শীতের রোগবালাই থেকে সতর্ক থাকুন

শীত মৌসুম চলে এসেছে। রাজধানীতে শীতভাব ততটা অনুভূত না হলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামে এখন বেশ ঠান্ডা। সাধারণত গরমের তুলনায় শীত আরামদায়ক ঋতু। তবে এ সময় বেশ কিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। শীতে বাতাস ভারী থাকে।

গর্ভবতীর লাইফস্টাইল কেমন হবে

ডা. হাসনা হোসেন আঁখি

শীতে গর্ভবতীদের সুস্থ থাকা জরুরি। শীতের প্রভাবে মা ও অনাগত সন্তানের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেজন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। শীতে সাধারণত আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। গর্ভবতীরা এমন এক বিশেষ অবস্থায় থাকে যে, তাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয় যেন ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া না হয়। যাদের হাঁপানি আছে, তাদের এ সময় হাঁপানির টান আরও বেড়ে যেতে পারে। শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই সবার ভেতর আলসে ভাব আসে। তাই গর্ভবতীর হাঁটাহাঁটিতে যেন ছেদ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শীতে গর্ভবতী নিরাপদ থাকতে হলে যা করবেন-

* সুষম খাবার খেতে হবে

গর্ভকালীন নারীদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। এ সময় মা যদি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন, তবে সন্তানও সুস্থ থাকবে এবং প্রসবকালীন জটিলতা ৯৫ শতাংশ কমে যাবে। শীতকালে বাজারে শিম, মুলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক সুলভমূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। গর্ভবতীদের ভাত কম খেয়ে এ খাবারগুলো বেশি খাওয়া উচিত। আলু একটু কম খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। ফলের মধ্যে পেয়ারা, বরই, কদবেল, জলপাই, কামরাঙ্গা, কমলালেবু, আনার একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার। এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, লোহা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ও সি।

* পরিমিত পানি পান করতে হবে

শীতকালে যেহেতু ঘাম কম হয় এবং পিপাসা কম পায়, তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা এ সময় পানি কম খাই। গর্ভবতীদের এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা জরায়ুর পানি কমে যাওয়া, মাথাব্যথা ও প্রিটাম লেবার বা সময়ের আগেই প্রসবের মতো জটিলতা কমবে।

* ত্বকের যত্ন নিতে হবে

গোসল করার সময় শরীরে বেশিক্ষণ পানি ঢালবেন না। অতিরিক্ত গরম পানিও ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের শুষ্কতা আরও বেড়ে যায়। চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করা এবং উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করতে চেষ্টা করবেন। গোসলের সময় গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করুন। গোসলের পর ত্বক ভেজা থাকা অবস্থায় হাতে, পায়ে, মুখে ও শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একবার মেখে নিন। ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে গ্লিসারিন কিংবা শরীরে মাখার অলিভ অয়েল নিয়মিত মাখতে পারেন। ঠোঁটে ভেসলিন ব্যবহার করবেন। ঠোঁটের উপরিভাগের পাতলা শুষ্ক ত্বক কখনো টেনে তোলার চেষ্টা করবেন না, তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। নিয়মিত হালকা মেসেজ করতে পারেন, এতে রক্ত চলাচল ভালো থাকে, যা ত্বকের জন্য উপকারী।

* আরামদায়ক গরম পোশাক পরুন

শীতে সোয়েটার কিংবা গরম কাপড় পরিধান করুন। এমন কিছু পরবেন না, যাতে পেটের ওপর চাপ পড়ে এবং চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। সামনের দিকে বোতাম আছে এমন লম্বা সোয়েটারগুলো এ সময় গর্ভবতীর আরাম দিতে পারে। শীতের কাপড়ের সঙ্গে জুতার দিকেও নজর রাখতে হবে। পা থেকে ঠান্ডা লেগে গর্ভবতী এবং অনাগত সন্তানের সমস্যা হতে পারে। পা ঢাকা জুতা এবং ঘরে-বাইরে মোজা পরে থাকবেন।

* সর্দি কাশি হলে চিকিৎসা নিন

অনেক গর্ভবতী সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে সর্দি-কাশিতে ওষুধ খেতে চান না। সর্দি-কাশি যদি দুই তিন দিনের বেশি থাকে, তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। সর্দি-কাশি জীবাণুবাহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে এবং অনেক সময় এ থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। ডাক্তার গর্ভকালীন অবস্থায় নিরাপদ ওষুধ রোগীকে দেবেন। যদি মায়ের ঠান্ডার সমস্যা আগে থেকেই থাকে, তবে ঠান্ডা পানি ব্যবহার এবং ঠান্ডা কিছু না খাওয়াই শ্রেয়।

* ব্যায়াম করুন

শীতকালে আলসেমি ভর করে বলে অনেকে ব্যায়াম করতে চান না, লেপের মধ্যে শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে দেন। এটা একেবারেই ঠিক নয়। সকালে বা বিকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। বেডিং টেকনিক ফলো করুন। এটা প্রসব বেদনা যখন উঠবে, তখন কাজে দেবে। মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করতে পারেন।

হলেখক : ফার্টিলিটি কনসালটেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট, হার্টবিট ফার্টিলিটি ক্লিনিক, গাজি টাওয়ার, গ্রীন রোড, ঢাকা।

দাঁতে শিরশির ও ব্যথা উপশমের প্রাকৃতিক উপায়

ডা. অনুপম পোদ্দার

দাঁতে কোনো গর্ত বা ক্যারিজ হলে, দাঁতের ফিলিং খুলে গেলে, দাঁত ভেঙে গেলে, দাঁতের শ্বাস বা পালপ যে কোনো কারণে আক্রান্ত হলে দাঁত ব্যথা হতে পারে। ঠান্ডার কারণেও অনেকের দাঁতে ব্যথা হয়ে থাকে। দাঁতে ব্যথা বা শিরশির কমাতে কোনো কোনো খাবার কার্যকরী তা জানতে হবে। দাঁতের যন্ত্রণা অনেকাংশে লাঘব করে কিছু মসলা জাতীয় খাবার।

▶ রসুন : এক কোয়া রসুন থেঁতলে নিয়ে অল্প একটু লবণ মিশিয়ে দাঁতে লাগালে অথবা রসুন চিবিয়ে খেলে দাঁতের ব্যথা কমে যায়। প্রতিদিন ২-৩ বার এই নিয়মে রসুন খেতে পারেন।

▶ লবঙ্গ : কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে দাঁতে লাগালে ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।

▶ গোলমরিচ : এর সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রাখলেও ব্যথা কমে। এটা পরপর কয়েকদিন করলে উপকার পাওয়া যায়।

▶ কাঁচা পেঁয়াজ : এক টুকরা কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেলে ব্যথা কমে যায়।

▶ হিং গুড়া : আধ চা চামচ হিং গুঁড়া দুই টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগালে ব্যথা কমে যায়।

▶ লবণ : এক গ্লাস অল্প গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে ব্যথা কমে।

▶ পেয়ারা পাতা : পেয়ারা পাতা দাঁত ব্যথায় দারুণ উপকারী। দুটি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে আক্রান্ত দাঁতে চেপে রাখলে ব্যথা উপশম হয়।

▶ ঠান্ডা খাবার : ঠান্ডা বা বরফ জাতীয় খাবার দাঁতের ব্যথা কমাতে সহায়ক।

▶ ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট : এটি দাঁত ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

▶ দূর্বা ঘাস : এটির রসও দাঁত ব্যথা কমাতে পারে।

▶ মধু : এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন, ভালোভাবে মিশ্রণটি নেড়ে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে এটা দিনে করা ভালো।

▶ গ্রিন টি : এটি ঠান্ডা করে মাউথ ওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

▶ মরিচ : এতে থাকা ক্যাম্পসাইমিন উপাদান দাঁতের ব্যথা উপশমে কাজ করে।

এসবে ব্যথা না কমলে ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক : অধ্যক্ষ, খুলনা ডেন্টাল কলেজ।

বাত-ব্যথার রোগীদের করণীয়

ডা. তাহমীদ কামাল

শীতকালে রোগীরা জয়েন্ট ও হাড়ের ব্যথা নিয়ে অনেক অভিযোগ করেন। আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের জন্য এ সময়ে খুব সাবধান থাকতে হয়। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টগুলো শক্ত হতে শুরু করে এবং হাড়ে ব্যথা শুরু হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদেরও উঠতে-বসতে সমস্যায় পড়তে হয়। শীতকালে বাতের রোগীরা কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্যথা থেকে আরাম পেতে পারেন।

* শরীর গরম রাখুন

গরম কাপড় দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রাখুন। শরীর গরম রাখলে জয়েন্টের ব্যথা কমবে। হাতের তালু এবং হাঁটু ঢেকে রাখুন। পায়ে মোজা পড়ুন। ঠান্ডায় এ ধরনের সতর্কতা আর্থ্রাইটিসে আরাম দেয়।

* বডি হাইড্রেট করুন

শীতকালে আমরা পানির পিপাসা কম অনুভব করি, তার এর মানে এই নয় যে, আমাদের শরীরে ফ্লুইড বা তরল এ সময়ে কম প্রয়োজন। কোনো ঋতুতেই শরীরে পানির অভাব যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ফলে আমাদের শরীর বেশি সক্রিয় থাকে। পানির পরিবর্তে চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ বা অন্যান্য পানীয় দিয়ে শরীরকে হাইড্রেট রাখতে পারেন।

* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের লোকেরা সাধারণত কম সক্রিয় থাকে। আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবসময় তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। প্রয়োজনে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াও শুরু করতে হবে। এর জন্য কার্ডিও, ওজন কমানোর প্রশিক্ষণ বা বিশেষ ডায়েটের সাহায্য নেওয়া যায়। শরীরের ওজনাধিক্যের পুরো প্রভাব পড়ে জয়েন্ট ও হাড়ের ওপর। তাই এটা নিয়ে গাফিলতি করবেন না।

* কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন

শীতকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে স্বস্তি পাওয়া যায়। গরম পানি দিয়ে গোসল বা হট শাওয়ার আর্থ্রাইটিস রোগীদের আরাম দেয়। এটি রোগীর জয়েন্ট এবং পেশিগুলো রিল্যাক্স করে দেয়। ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে, তাই ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে ভুলবেন না।

* ভিটামিন ডি

শীতকালে ভিটামিন-ডি-এর অভাব থাকলে শরীরে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে অস্টিওপরোসিস হতে পারে। তাই শীতে কিছু সময় রোদে থাকার চেষ্টা করুন। দিনে ১৫ মিনিট রোদ পোহালে শরীর যথেষ্ট ভিটামিন-ডি পায়। ডিম, মাশরুম, চর্বিযুক্ত মাছ, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারও খেতে পারেন।

লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, ধানমন্ডি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, সাতমজিদ রোড, ঢাকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button