খেলা

রনির বিধ্বংসী বোলিংয়ে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে কোয়ালিফাইয়ার নিশ্চিত করলো সাকিবের রংপুর

চট্টগ্রাম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ (বাসস) : বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনির বিধ্বংসী বোলিংয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোয়ালিফাইয়ার নিশ্চিত করলো সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স। আজ নিজেদের ১১তম ম্যাচে রংপুর ১ উইকেটে হারিয়েছে তামিম-মুশফিকের ফরচুন বরিশালকে। বিপিএলের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোন দল ১ উইকেটে ম্যাচ জিতলো। প্রথম ২০১৩ সালে মিরপুরে সিলেট রয়্যালস ১ উইকেটে হারিয়েছিলো বরিশাল বার্নাসকে।
এই জয়ে ১১ ম্যাচ শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত করলো সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করা রংপুর। ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে থেকেও প্লে-অফে দৌড়ে টিকে আছে বরিশাল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নিয়ে বরিশালকে ২৫ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো শুরু এনে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
পঞ্চম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে প্রথম বলেই তামিমকে বিদায় করেন রংপুরের সাকিব আল হাসান। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ বলে ৩৩ রান করেন তামিম।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৭২ রান যোগ করে বরিশালকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন ইংল্যান্ডের টম বান্টন ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্স। ১১ ওভারে ১০৪ রান তুলে ফেলে তারা। ১২তম ওভারে ব্যক্তিগত ২৬ রানে বান্টনকে শিকার করে রংপুরকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নিউজিল্যান্ডের জেমস নিশাম।
দলীয় ১১০ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে বান্টনের আউটের পর বরিশালের ইনিংসে ব্যাটিং ধস নামান এবারের আসরে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা রনি। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১২৯ রানে অষ্টম উইকেট হারায় বরিশাল।
১৩তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই তিনটি উইকেট তুলে নেন রনি। মুশফিকুর রহিমকে ৫, সৌম্য সরকারকে শূণ্য এবং ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে ৪৬ রান করা মায়ার্স শিকার হন রনির। নিজের পরের ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ৯ রানে থামান তিনি। তৃতীয় ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজকে ৩ রানে বিদায় করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন রনি।
বড় সংগ্রহের পথে থেকেও রনির তোপের পর শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৫১ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। ৪ ওভারে ১২ রানে ৫ উইকেট নেন রনি। এবারের বিপিএলে তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে সেরা বোলিং ফিগারের নজির গড়েছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। আর বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ এবং বাংলাদেশিদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগার মালিক এখন রনি। এতে ভেঙ্গে যায় সাকিবের রেকর্ড। ২০১৭ সালে মিরপুরে রংপুরের বিপক্ষে ৩ দশমিক ৫ ওভারে ১৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলতে নামা সাকিব।
জবাবে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন রংপুরের মোমিনুল হক। দ্বিতীয় উইকেটে ২৩ বলে ৫৩ রান তুলে রংপুরকে লড়াইয়ে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রান্ডন কিং ও সাকিব।
পাওয়ার প্লের শেষ বলে কিংকে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২২ বলে ৪৫ রান করেন কিং। পরের ওভারে মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ বলে ২৯ রান করা সাকিব।
এরপর অধিনায়ক নুরুল হাসানকে ২ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ এবং মাহেদি হাসানকে ৭ রানে বিদায় দেন মিরাজ। ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে ইংল্যান্ডের টম মুরাসকে নিয়ে ২৫ বলে ৩১ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের সাথে ১৯ রান যোগ করে রংপুরকে লড়াইয়ে ফেরান নিশাম। মুরস ১৭ এবং একবার জীবন পাওয়া নিশাম ১৭ বলে ২৮ রানে আউট হন।
শেষ ৩ ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৭ রান দরকার পড়ে রংপুরের। কিন্তু ১৮তম ওভারে প্রিটোরিয়াস ১৩ ও ১৯তম ওভারে রনি শূণ্যতে ফিরলে ম্যাচ টান-টান উত্তেজনা তৈরি হয়। কারন শেষ ওভারে ১ উইকেটে হাতে নিয়ে ২ রানের সমীকরণ পায় রংপুর।
সাইফুদ্দিনের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ১ রান নেন শামিম এবং তৃতীয় বলে হাসান চার মেরে রংপুরকে জয় এনে দেন। শামিম ৪ ও হাসান ১ রানে অপরাজিত থাকেন। বরিশালের মিরাজ ও ম্যাককয় ৩টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রংপুরের রনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ফরচুন বরিশাল : ১৫১/৯, ২০ ওভার (মায়ার্স ৪৬, তামিম ৩৩, রনি ৫/১২)।
রংপুর রাইডার্স : ১৫৫/৯, ১৯.৩ ওভার (কিং ৪৫, সাকিব ২৯, মিরাজ ৩/২৪)।
ফল : রংপুর রাইডার্স ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আবু হায়দার রনি (রংপুর রাইডার্স)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button