বিশেষ খবর

২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত উত্তীর্ণের পরও ফের মৌখিক পরীক্ষা: ১২শ’ জনের আপিল শুনবেন আপিল বিভাগ

ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত উত্তীর্ণের পর নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১২’শ জনকে ফের দ্বিতীয় বার মৌখিক পরীক্ষা বিষয় সংক্রান্ত রায়ের রিভিউতে ‘লিভ মঞ্জুর’ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বিষয়টি নিয়ে আপিল শুনানির জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।

আদালতে পরীক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন ও ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।

ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ১২’শ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন তারা নিয়োগের অপেক্ষায় ছিল তখন এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত দেয়। প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট মামলা হয়। হাইকোর্ট ওই সিদ্ধান্ত বিষয়ে রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করলে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা সঠিক বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ বিষয়টি নিয়ে লিভ মঞ্জুর না করে’ হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সিপি নিষ্পত্তি (জাজমেন্ট সেটাসাইড) করে দিয়েছিল। তাতে আমরা পেয়ার ট্রায়াল থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যার ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন বলেন, এ রায় আমরা রিভিউ চেয়ে আবেদন ফাইল করি। আজ শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছে। আমরা তিনটি সাংবিধানিক পয়েন্ট রেইজ করে গ্রাউন্ডস তুলে ধরে রিভিউ চেয়েছি। সে লিভ মঞ্জুর করেছে সর্বোচ্চ আদালত। ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন বলেন, বিসিএস পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীন এখতিয়ার সাংবিধানিকভাবে সরকারি কর্ম কমিশন তথা পিএসসির। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ছিল না। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি আপিল আকারে শুনবেন সর্বোচ্চ আদালত। এ সিনিয়র এডভোকেট বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশায় থাকা এ সকল বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তির অবসান ঘটবে বলে আমরা আশা করছি।

২৭তন বিসিএস-এর প্রথম মৌখিক পরীক্ষা ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্তে বাতিল করে দেয় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নিয়োগ বঞ্চিত ২৭ তম বিসিএস-এর প্রায় ১২’শ পরীক্ষার্থী।
২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে এবং দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। তার আগে ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করে সরকারপক্ষ। ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ সেই ‘লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি’ করেন আপিল বিভাগ। এ সংক্রান্ত রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনটি দায়ের করা হয়। আজ সেই রিভিউ মঞ্জুর করে আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button