জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে এবার কারা হচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি তা নিয়ে সর্বত্রই চলছে ব্যাপক আলোচনা। অতীতে নবম, দশম ও একাদশ সংসদে চট্টগ্রাম থেকে মাত্র দুজন সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন। যা বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে। আসন ভিত্তিক আনুপাতিক হারে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজনসহ), জাতীয় পার্টি দুটি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন বলে সংসদ বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
সংরক্ষিত আসনে চট্টগ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নারীনেত্রী দলীয় মনোনয়ন নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এই ১৯ জন নারী নেত্রী মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছেন গুটিকয়েক জন। যদিও ১৯ জনের তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। বেশিরভাগই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সদস্য বা উত্তরসূরী বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিনী। আছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাত, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে শামীমা হারুন লুবনা, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, সাতকানিয়া–লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, ডবলমুরিং আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ডা. আফছারুল আমীনের স্ত্রী ডা. কামরুন্নেছা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আক্তার চৌধুরী, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও চসিক কাউন্সিলর জোবাইরা নার্গিস খান, চট্টগ্রাম মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপিকা সায়েরা বানু রৌশনী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রুমানা নাসরীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য এবং ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য সাবরিনা চৌধুরী, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চসিক কাউন্সিলর নীলু নাগ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বড় মেয়ে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজি শারমিন সুমি, সাবেক কাউন্সিলর রেহানা বেগম রানু। এ ছাড়া আরও অনেকেই মনোনয়ন লাভের জন্য ফরম নিতে পারেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, নিষ্ঠা ও সততার সাথে জনকল্যাণকর কাজসহ দলীয় ও সংসদীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। সুযোগ হলে আবারও দলের আদর্শ সমুন্নত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো।
সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করছি। ইচ্ছে আছে এবার সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের ব্যাপারে। সারা জীবন তো আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছি। প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। তফসিল ঘোষণা করা হলে সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন চাইবো। তবে তিনি মনোনয়নের জন্য কোনো ধরনের দৌঁড়ঝাঁপ করছেন না বলে জানান। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে দলের জন্য আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বলেন, রাজনীতির সাথে আমাদের পরিবারের সম্পৃক্ততার ইতিহাস ৭২ বছরের। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতির শুরু। স্বৈরশাসক এরশাদ হটানো থেকে গণজাগরণ মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলন সবখানে আমার অংশগ্রহণ ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন–তাহলে দলের জন্য এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো।
তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় কারা স্থান পাচ্ছেন তা জানতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন দিবেন।
নবম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান এবং দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান এবং দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে আরো একজন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি হলেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবিহা নাহার বেগম (সাবিহা মুসা)।
একাদশ সংসদে ফটিকছড়ি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনিও সংসদ সদস্য ছিলেন। খাদিজাতুল আনোয়ার সনি সদ্য সম্পন্ন হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনপ্রতিনিধি, আইনজীবীসহ সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে এবং জাতীয় ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন নারীনেত্রীরা এবারও সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নিবেন বলে জানা গেছে।
সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ঢাকায় আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি–প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখাও করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীদের সাথে দেখা করেও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
আইন অনুযায়ী সাধারণ আসনের নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটগত সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের ভোট ফেব্রুয়ারিতে করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইসি সুত্র বলছে, পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা হবে।