আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

যশোর হবে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল


মালিক উজ জামান, যশোর : পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ যজ্ঞের সঙ্গে যশোর অঞ্চলের আনুষঙ্গিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে যেসব কর্মকান্ড চলছে, তাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর যশোর দেশের ৩য় বৃহত্তম বিনিয়োগের ক্ষেত্র হচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দুই-এক বছরের মধ্যেই এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড দৃশ্যমান হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আগে থেকেই কৃষি ও শিল্প উন্নয়নে যশোর ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শীত-গ্রীষ্ম মিলিয়ে বছরে প্রায় ৬ লাখ টন নানান জাতের সবজি উৎপাদন করেন যশোরের চাষিরা। যশোর ও আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব শহরেরই চাহিদা মেটায়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোলসহ বেশকিছু সবজি গত কয়েক বছর ধরে কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে। দেশে কাঁচা ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই উৎপাদন হয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকায়। এছাড়া ফুলও রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন যশোরের রেনু পোনা হ্যাচারি মালিকরা। দেশে রেনু পোনার মোট চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যশোরের হ্যাচারি গুলোতে উৎপাদন হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে যশোর গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। যশোরের সঙ্গে দেশের প্রধান প্রায় সব শহরের রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার তিনদিকে রয়েছে তিনটি স্থলবন্দর। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলের পাশাপাশি দক্ষিণে সাতক্ষীরার ভোমরা ও উত্তরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর। এসব বন্দর সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে যশোরের সঙ্গে সংযুক্ত। রয়েছে নওয়াপাড়া নৌবন্দর, আর কিছু দূরে মোংলা সমুদ্র বন্দর। সড়ক ও নৌপথের মাধ্যমে রয়েছে এ দুই বন্দরের সংযোগ। ২৭২ কোটি টাকা খরচ করে খনন করা হচ্ছে ভৈরব নদ। পদ্মা সেতুতে যুক্ত হচ্ছে রেল লাইন। ফলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব অন্তত তিন ঘণ্টা কমে যাবে। কালনা ৬লেন ব্রীজ চালু হলে দূরত্ব কমবে ১১৩ কি:মি:। থাকবে না কোন ফেরি। ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় ঢাকা থেকে যশোর অথবা বেনাপোলে পৌছানো যাবে।
ঢাকা-যশোর, যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-কুষ্টিয়া সড়ক ফোরলেন হবে। যশোরে রয়েছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, খুলনায় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপারে। যশোরের সদর ও ঝিকরগাছা উপজেলায় যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে প্রায় ৯০০ একর জায়গার ওপর এ দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বিসিক-২ নামে আরেকটি প্রকল্পের জন্য জমি বাছাইয়ের কাজ চলছে। আগামী দুই বছরে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথের দুর্দান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে সরকারের যশোরকে নিয়ে যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে কর্মকৌশল, তাতে অচিরেই যশোর দেশের ৩য় বৃহত্তম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিণত হবে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অর্থনৈতিকভাবে যশোরের এগিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথে যশোর থেকে দেশের যে কোনো স্থানে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব। সে কারণে এখন যশোরে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে অর্থনৈতিকভাবে এ জেলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। যশোরের নওয়াপাড়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা রেলওয়ের বিশাল সম্পত্তিতে খুব সহজেই কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা সম্ভব, সরকার একটু উদ্যোগী হলেই এ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে খুব বেশি সময় লাগার কথা না।
যশোরের ওপর দিয়ে গ্যাস নিয়ে খুলনার শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গ্যাস যাতে যশোরের শিল্পে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দরের কাছে দুটি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, চলতি বাজেটেই এ ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দের দাবি করেছেন তিনি। এগুলো দ্রুত করা গেলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরপর শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যশোর অঞ্চল সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button