সাতদিনের মধ্যে জাহালমকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ
পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোর ঘটনায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের মধ্যে সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এক বেসরকারি ব্যাংকের প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, হাইকোর্ট ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বেসরকারি ব্যাংকটি। সেই আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। আর সাতদিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা জাহালমকে দিতে বলেছেন। বাকি ক্ষতিপূরণের বিষয় আপিলে নিষ্পত্তি হবে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।
পরে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন। পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি সম্পন্ন হয়। পরে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। টাকা পরিশোধ করে এক সপ্তাহ পর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ব্যাংক আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ্য ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের স্থলে জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।
দুদকের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
এ ঘটনায় দুদকের পদক্ষেপ নিয়ে উচ্চ আদালত বলেন, দুদকের আইনজীবী প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে- এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ১১ জনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আদালত বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের স্থলে জাহালমকে এনেছে। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলপথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে।