খুলনা বিভাগীয় গণ সমাবেশে বিএনপির লাভ-ক্ষতি
মালিক উজ জামান, যশোর : খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্বরে শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ এ বছরে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে উদাহরণ। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর দলে মহাসমাবেশের প্রাক প্রস্তুতি হিসাবে এ আয়োজন। সমাবেশে ৯ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন। পক্ষকালের প্রস্তুতিতে এ সমাবেশে খুলনাঞ্চলে বিএনপির লাভ-ক্ষতি দুটোই হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে গুলিতে নূরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধান, শহীদুল ইসলাম শাওন ও আব্দুল আলীমের আত্মাহুতি গণতন্ত্রমুক্তির আন্দোলনে নতুন প্রেরণা বলে বক্তারা উৎসাহ যুগিয়েছেন। প্রধান অতিথি দলের মহাসচিব জনগণের অভ্যুথানের মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলনের তীব্রতরের দাবি তুললে তৃণমূলের কর্মীরা দু’হাত তুলে সমর্থন জানান। রোববার স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ উল্লেখিত বক্তব্যকে অরাজনৈতিক বলে সমালোচনা করেছেন। মূলত সমাবেশে তৃণমূলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি দক্ষিণ জনপদে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বড় শক্তি হিসেবে জানান দিয়েছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দের মতে, এ সমাবেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমাবেশের উপস্থিতি দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, একদফার আন্দোলনে কর্মীরা প্রস্তুত হয়েছে, হামলা মামলার ভয় কেটেছে, সকল স্তরের সাংগঠনিক কাঠামোগুলোতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, বাস-লঞ্চের তথাকথিত ধর্মঘটে পরিবহন শ্রমিক, দুর্ভোগের স্বীকার নারীপুরুষ, হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের সমর্থন দলের অনুকূলে এসেছে, হিংস্রতার পরিবর্তে পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া, জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বড় প্রচার পাওয়া শাসকদল ও তাঁদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসী তৎপরতায় দলের পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া তিন দিন আগে সমাবেশের জন্য নগরীতে আসা, সমাবেশের আগের রাত্রে খোলা আকাশের নীচে সোনালী চত্বরে ঘুমানো এবং হেটে আসায় দলের কর্মীরা ত্যাগের প্রমাণ দিয়েছে বলে অভিমত নেতৃবৃন্দের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এর বিপরীত দিক আছে। বিশেষ করে খুলনা রেল স্টেশন ভাঙচুর করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ করায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসিয়া সী ফুডে ভাঙচুর, সাবেক কাউন্সিলর কে.এম হুমায়ুন কবিরের বাসভবনে হামলা, বৈকালীস্থ ১৪ নং ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, একাধিক কর্মী গুলিবিদ্ধ, চার মামলায় দলের কয়েক শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আমিন আহমেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, নড়াইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহারিয়ার রিজভী জর্জের নেতৃত্বে পৃথক মিছিল আসায় অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ চাঙা, মোংলায় ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পৃথক মিছিল আসায় উত্তেজনা এবং ঢাকার তরুণ রাজনীতিক ইশতিয়াক হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে বক্তৃতার সুযোগ না দেওয়ায় কর্মী সমর্থকদের একাংশকে হতাশ করেছে। মঞ্জু-মনির নেতৃত্বাধীন অংশ বিএনপি খুলনা মহানগর সাবেক নেতৃবৃন্দের ব্যানারে বিদ্রোহী হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। বিভক্তির রেখা স্পষ্ট সেখানে। খুলনায় সাবেক বিএনপি নেতৃবৃন্দের নামে একটি উপদল আবির্ভাব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে নগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি অথবা সমাবেশে বক্তৃতা দিতে পারা না পারায় দলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন দেখা দেয়নি। প্রসঙ্গ নিয়ে নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন সমাবেশের পূর্বে বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই, অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে খুলনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। কাউকে দলের অন্তর্ভুক্ত করা অথবা কাউকে দূরে সরিয়ে দেয়া একমাত্র এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। সমাবেশে খুলনা নগরীর উপস্থিতি নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মত। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, দলের খুলনা নগরীর কর্মীদের উপস্থিতি ছিল কম। এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে প্রতিপক্ষ।