আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

মধুমতি সেতুতে যান চলাচল শুরু


মালিক উজ জামান, যশোর : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের কালনা মধুমতি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার (১০ অক্টোবর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হওয়ায় খুশি যানবাহন চালকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই চোখের দেখা দেখতে সেতু এলাকায় ভীঢ় করছেন।
এদিন আগে থেকেই সেতু পারাপারের অপেক্ষায় ছিলো মোটরসাইকেল, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যন্যা যানবাহন। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ডিজিটাল পদ্ধতির ৮টি টোল বুথের মধ্যে প্রথম দিনে ৪টি চালু থাকায় সেতুর দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘসারি তৈরি হয়। তবে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে সবগুলো টোল বুথ চালু হওয়ার আশা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। মধুমতি সেতুতে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশনকৃত জিপ ও কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা।
এর আগে, সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম ৬ লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধনের পর উৎসুক মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়। অনেকে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন স্বপ্নের এই সেতু। আবার কেউ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে মধুমতি নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছেন। আনন্দ-উল্লাস, আবেগ-ভালোবাসার অন্যরকম অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন এরা।
সেতু উদ্বোধনের পর অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুরেছেন মধুমতি সেতু দিয়ে। স্বপ্ন এখন বাস্তব। সেতু এলাকার দুপাড়ের মানুষের মাঝে তাই আনন্দের প্রতিফলন। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
সেতুটি চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, যশোর, খুলনা, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়নের আশা করছেন সবাই। দীর্ঘদিনের ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ কাটিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে যেতে পেরে খুশি যানবাহন চালকরা। বাসচালকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কালনা ঘাটে ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় নষ্ট হতো। আজ সেতু পার হতে মাত্র এক মিনিট সময় লেগেছে। এর চেয়ে খুশি আর কিছু থাকতে পারে না। মোটরসাইকেল চালকরা জানান, আগে কালনা ঘাট পার হতে যে দুর্ভোগ ছিলো তা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু দুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। আমাদের এখন আর দীর্ঘ যানজটে দাঁড়িয়ে ফেরি পার হতে হবে না। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে।
মধুমতি সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান জানান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে নড়াইলের কালনাঘাট এবং পূর্বপ্রান্তে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি যাওয়া যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button