তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন জরুরি
প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা
তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়িয়ে এর সহজলভ্যতা এবং ব্যবহার কমিয়ে আনা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে চলতি অর্থবছর থেকে সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও একটি শক্তিশালী জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন জরুরি।
আজ ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার বেলা ১ টায় ‘ইকোনোমিক্স অব ট্যোবাকো ট্যাক্সেশন : পাবলিক হেলথ পার্সপেকটিভ’ শিরোনামে তিন দিনব্যাপী এক অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সকাল সাড়ে ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর যৌথ আয়োজনে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। মিটিং সফটওয়ার জুমে এ প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সমাপনী দিনে প্রশিক্ষক হিসেবে একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা বলেন, ২০০৪-০৫ অর্থ-বছরে তামাকজাত দ্রব্য থেকে থেকে রাজস্ব আয় ছিলো ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তামাকজাত দ্রব্য থেকে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ৩০ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। যা প্রায় সাড়ে ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ আইন পাস, সংশোধনসহ তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতিটি উদ্যোগে তামাক কোম্পানী রাজস্ব হারানোর ভয় দেখিয়েছে। যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।
দিনের প্রথম প্রশিক্ষক হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারাবিশ্বে অ্যাডভেলরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করা হচ্ছে। এতে সরকার লাভবান হচ্ছে পাশাপাশি তামাক ব্যবহারও কমে আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এনবিআর তামাকে সুনির্দিষ্ট তামাক করারোপ পদ্ধতি প্রচলন করবে বলেও আমরা প্রত্যাশা করছি।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, যথোপযুক্ত পদ্ধতি ও পরিমাণে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধিসহ সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রন্ত করতে তামাক কোস্পানী নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা নানা রূপকথা তৈরী করে। এই প্রশিক্ষণের মাধমে অর্জিত জ্ঞান তামাক কোস্পানীর এসব অপকৌশল বুঝতে এবং তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি তামাক কর বিষয়ক অধিকতর জ্ঞান চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিন দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, সহকারি অধ্যাপক মো. নাজমুল হোসেন, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল হিল্লোল।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্য ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রশিক্ষণে গণমাধ্যম কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় তারা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধিতে একসাথে কাজ করারও প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।